হাওরের বাঁধ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা রয়েছে


প্রকাশিত: ১২:৩৩ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে সরকারের সমন্বিত পরিকল্পনা নেই। হাওর অঞ্চলে সরকারি ৩৭টি সংস্থার ১৪৫ ধরনের প্রকল্প চলমান। কিন্তু তাদের এ কাজে যথাযথ সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।

এছাড়া হাওরের বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা রয়েছে। স্থানীয় সরকারের দায়িত্বহীনতার কারণেই বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাসিন্দারা। এ অবস্থায় সরকারি কাজে দীর্ঘসূত্রতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বৃস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে উপাত্ত ঘাটতি বিশ্লেষণ : বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত, ব্যাংকিং অ্যাটলাস ও হাওরাঞ্চলের পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক তিনটি গবেষণা গ্রন্থে মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এসব গ্রন্থ প্রকাশ করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এবং ইউএনডিপির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জি।

অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, পুরো হাওর অঞ্চলের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনার প্রয়োজন। হাওরের সম্পদ খাতে সঠিক ব্যবহার করে সবাই যেন সমান সুবিধা ভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সমন্বিত পরিকল্পনার সঙ্গে হাওর অঞ্চলের মানুষদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, সারাদেশে ব্যাংকিং সুবিধা সম্প্রসারণ হয়েছে। কেউ পেছনে পড়ে থাকবেনা।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিটির অধ্যাপক ড. হামিদুল হক বলেন, হাওরবাসী তাদের সুবিধার জন্য অনেক সময় হাওরের বাঁধ কেটে দেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িক্ত হলো সেগুলো সংস্কার করা। এজন্য শুধু একা ইঞ্জিনিয়ারকে দোষারোপ করলে হবে না। উপর থেকে নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তারা কাজ করতে পারে না। এজন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মর্তারা বাঁধ ভাঙার দায় এড়াতে পারে না।

তিনি বলেন, হাওর রক্ষার জন্য প্রথমে হাওর ইজারা দান পদ্ধতি বাতিল করা প্রয়োজন। বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময় হাওর অঞ্চল ৪০ ভাগ জলমগ্ন থাকে। এই সময়টা মাছ আহরণের উপযোগী। কিন্তু ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে ইজারা দেয়ার ফলে হাওরের সাধারণ মানুষ মাছ আহরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, হাওর অঞ্চলে কাজের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো প্রয়োজন। সরকার কাজ করছে ঠিকই কিন্তু পর্যাপ্ত তদারকির অভার রয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৪০ ফুট বাঁধ কেন, হিমালয়ের মতো বাঁধ দিলেও হাওরকে রক্ষা করা যাবেনা। এক্ষেত্রে দেশি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে মাস্টার প্ল্যান করতে হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের একটি জায়গায় হাত পা বাঁধা আর তা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। যদিও আমরা এই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নই।

হাওর নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থে বলা হয়, হাওরের উন্নয়নে শুধু সরকারি সংস্থা নয়, এখানে বেসরকারি উদ্যোগ আনা প্রয়োজন। হাওরের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) তাগিদ দেয়া হয়েছে। হাওর অঞ্চলের অধিবাসীরা মাত্র একটি ফসলের ওপর নির্ভরশীল। বন্যায় সেই ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা হয়ে পড়েন অসহায়। এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বিকল্প কৃষি অথবা গবাদিপশু পালনের বিষয়টিও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে উপাত্ত ঘাটতি বিশ্লেষণ শীর্ষক বইয়ে বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) পরিমাপের ৬৩টি সূচকের উপাত্ত একেবারেই নেই সরকারের হাতে। বর্তমানে ৭০টি সূচকের উপাত্ত রয়েছে এবং ১০৮টি সূচকের উপাত্ত আংশিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। এসডিজির ১৭টি বৈশ্বিক অভীষ্টের অধীনে ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে প্রয়োজন ২৩০টি সূচকের। সূচকের এই ঘাটতি পূরণে তথ্য সংগ্রহের তাগিদ দেয়া হয়েছে।

ব্যাংকিং অ্যাটলাস প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উপজেলা পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে। অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমে ব্যাপক উন্নতির বার্তা বহন করে এই পরিস্থিতি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের(আইবিএ) অধ্যাপক সৈয়দ মুনির খসরু, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী এবং ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হামিদুল হক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান এসএসআইপি প্রকল্প পরিচালক নকিব বিন মাহমুদ।

এমএ/ওআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।