প্রভাবশালীদের দখলে শার্শার বেতনা নদী


প্রকাশিত: ০৩:৩১ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

যশোরের শার্শা উপজেলায় উন্মুক্ত বেতনা নদীতে পাটাবাধ ও মাটির বাধ দিয়ে অবৈধভাবে মাছ চাষ করায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে চাষিদের কষ্টার্জিত ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। উপজেলার শার্শা, নিজামপুর, ডিহি, লক্ষণপুর, বেনাপোল, বাহাদুরপুর, পুটখালী, গোগা, কায়বাসহ প্রত্যেকটি ইউনিয়নে উন্মুক্ত বেতনা নদী ও খালে আড়াআড়ি দেড় শতাধিক পাটাবাধ ও মাটির বাধ দিয়ে কতিপয় মাছ চাষ নামধারী চাষি দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে মাছ চাষ করছেন। যার ফলে এলাকায় বসবাসকারী জেলে পাড়ুই, বাগদি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এলাকার চিহ্নিত অবৈধ মৎস্য চাষকারীরা সংশ্লিষ্ট তহশিলদারদের নগদ নারায়ণে তুষ্ট করেই মাছ চাষ করছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ঐ মাছ চাষিরা এতই বেপরোয়া যে চলতি ইরি বোরো মৌসুমে ধান ক্ষেতে সেচ দেওয়ার জন্য শ্যালোমেশিন বসানোর পর শ্যালো মালিকদের তুলে দিতে বাধ্য করেন।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে সরকারি সম্পত্তির উপরে উন্মুক্ত বেতনা নদী, কোদলা নদী, ইছামতিসহ বিভিন্ন খালে দেড় শতাধিক অবৈধ পাটাবাধ ও মাটির বাধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি পাটাবাধ ও মাটির বাধ এবং অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিতকরণসহ দখলদারদের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। আগামি সপ্তাহের মধ্যে বাধ উচ্ছেদসহ সকল প্রকার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হলেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে।

তবে বছরের পর বছর উচ্ছেদের কথা বলা হলেও আদৌ এসব অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ হবে কিনা তা নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে রয়েছে কৌতুহল।  

এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, এ সকল মৎস্য চাষিরা মৎস্য আইন ভঙ্গ করে মাছ চাষ করছেন ফলে প্রবাহমান বেতনা নদীতে সাধারণ প্রবাহ না থাকায় দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত প্রায়। সেজন্য জরুরিভাবে সকল প্রকার বাধ উচ্ছেদ করা দরকার।

এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার জাগো নিউজকে জানান, বেতনা নদীতে অবৈধ বেড়িবাধের কারণে পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে প্রতি বছর শার্শার কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়। এজন্য আগামি বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই সকল অবৈধ বাধ উচ্ছেদ করা একান্ত দরকার।

শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উজ-জামান সত্যতা স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলার উন্মুক্ত বেতনা নদী, কোদলা নদী ও খালে প্রায় দেড় শতাধিক অবৈধ বেড়ি ও পাটা বাধ দিয়ে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালীরা। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ পেলেই এ সকল অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম শরিফুল আলমের নিকট উন্মুক্ত বেতনা নদীতে অবৈধ ভাবে পাটা বাধ ও মাটির বাধ দিয়ে সরকারি সম্পত্তি জবর দখল করে মাছ চাষকারীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব নদী ও খাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইনোভেটিভ প্রকল্পের আওতায় নেয়া হয়েছে। এজন্য অবৈধ দখলদার পাটাবাধ ও মাটির বাধের স্থান ও দখলকারীদের তালিকা প্রস্তুত করা হবে। এরপর ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও নির্দেশনা পেলেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।