চ্যানেল আইয়ের উপস্থাপককে গলা কেটে হত্যা (ভিডিও)


প্রকাশিত: ০৩:৪৪ এএম, ২৮ আগস্ট ২০১৪

চ্যানেল আই এর ইসলামিক অনুষ্ঠান ‘কাফেলা’ অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও ইসলামী ফ্রন্টিয়ারের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকীকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চুরির উদ্দেশ্যে তার বাসায় দুর্বৃত্তরা গেলে তিনি বাধা দিলে তাকে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তেজগাঁও জোনের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে আছি। কে বা কারা নুরুল ইসলামকে হত্যা করেছে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’

তিনি চ্যানেল আইয়ের জনপ্রিয় ইসলামিক অনুষ্ঠান ‘শান্তির পথে’ ও ‘কাফেলা’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করতেন। তাঁর মৃত্যুতে চ্যানেল আই পরিবার গভীর শোকাহত।

ফারুকীর মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে
মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুধবার রাত ১টা ২৫ মিনিটে তার বাসা থেকে মরদেহ আলী মেডিকেল সার্ভিসেসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে।

এর আগে পুলিশের ক্রাইম বিভাগের একটি দল বাসার ভেতর থেকে হত্যাকাণ্ডের আলামত সংগ্রহ করে। অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় তার বিক্ষুব্ধ অনুসারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেয় এবং একটি মিছিল নিয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত যায়।

হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত মনে করছেন অনুসারীরা
জনপ্রিয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান কাফেলা’র উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডকে ডাকাতি বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করেন ফারুকীর অনুসারী ও ঘনিষ্ঠজনেরা।

তাদের দাবি ফারুকীকে পরিকল্পিতভাবেই খুন করা হয়েছে। তার ঘনিষ্ঠজন ও বাসার সামনে ‍বিক্ষোভরত অনুসারীদের মনোভাব এমনই।

বুধবার রাতে ফারুকীকে হত্যার আগে দু্র্বৃত্তরা প্রথমে দাবি করে ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর লকার থেকে মাত্র লক্ষাধিক টাকাসহ স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়।

নৃশংস এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. বেলাল হোসেনের বরাত দিয়ে তার বড় ভাই ও নিহতের ঘনিষ্টজন মো. জালাল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জান‍ান।

তিনি বলেন, সন্ধ্যায় তার ছোট ভাই বেলাল হোসেন আরো দুই অনুসারীসহ নুরুল ইসলাম ফারুকীর বাসায় যান। রাত ৮টার দিকে কয়েকজন লোক হজ্বে যাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ করার কথা বলে ভেতরে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরই তারা বেলাল হোসেনসহ ৩ জনের হাত-পা বেঁধে মুখে গামছা ঢুকিয়ে পাশের রুমে আটকে রাখে।

এরপর তারা ফারুকীর কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। নুরুল ইসলাম এতো টাকা নেই মন্তব্য করে ৫ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। আর তাতে রাজিও হয় তারা। এরপর ফারুকী লকার থেকে টাকা বের করার সময় তাকে কব্জা করে হত্যাকারীরা। পরে তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

মো. জালাল বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে রাজাবাজার আমতলিতে থাকি। তখন থেকেই হুজুরের সাথে পরিচয়। আস্তে আস্তে তার অনুসারী হয়ে যাই। আমার ভাইও হুজুরের অনুসারী। দুঃখজনক এ ঘটনা ঘটার আগে উত্তরা থেকে এসেছে বেলাল। সেখানেই ওয়ার্কসপের ব্যবসা রয়েছে তার।

মো. জালালসহ ফারুকীর বন্ধুবৎসল ও অনুসারীদের অনেকেই বলেন, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কিন্তু ঘটনাকে ডাকাতি বলে চালিয়ে দিতেই টাকা দাবি করার মাধ্যমে নাকট সাজিয়েছে হন্তারকরা।

এদিকে তেজগাঁও জোনের উপপুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর দুর্বৃত্তরা লকার থেকে দেড় লাখ টাকা ও বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে।

মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী জনপ্রিয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘শান্তির পথে’ ও ‘কাফেলা’ এর উপস্থাপক ছিলেন। সুন্নী মতবাদে বিশ্বাসী এই উপস্থাপক বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া মৃত্যুর আগ পর্যন্তও তিনি হাইকোর্ট মাজার মসজিদের খতিব ছিলেন।

           

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।