পরকীয়ার জেরে খুন : ফাঁসছেন বন্ধু নাগরী


প্রকাশিত: ০৪:১৯ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

ব্যবসায়ী বন্ধু নুরুল ইসলাম খুনের ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন বন্ধু কবি শাহাবুদ্দীন নাগরী। নুরুল ইসলামের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জেরে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার নাগরী বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন।

নুরুল ইসলামের স্ত্রীর সঙ্গে নাগরীর পরকীয়ার সম্পর্ক আগে থেকেই ছিল অনেকটা চাউর। বন্ধুর শারীরিক অক্ষমতা ও অসুস্থতার সুযোগে গড়ে উঠে পরকীয়ার সম্পর্ক। সন্তানহীন নুরুল ইসলাম বাসা থেকে বের হলেই ফোন পেতেন শাহাবুদ্দীন নাগরী। চলে যেতেন বন্ধুর বাসায়। তবে হঠাৎ বন্ধু খুনের পেছনে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে অভিযোগে গ্রেফতার হন তিনি। একই ঘটনায় গ্রেফতার হন নিহত নুরুলের স্ত্রী নুরানী আক্তার সুমী (৩৫) ও নাগরীর উপহার দেয়া নতুন গাড়ির চালক সেলিম।   পুলিশ ও অ্যাপার্টমেন্টের কর্মচারীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নিউ মার্কেট থানা পুলিশ জানায়, গত ১৩ এপ্রিল রাজধানীর এলিফেন্ট রোডের ১৭০/১৭১নং ডম-ইনো অ্যাপার্টমেন্টের পঞ্চম তলায় নুরুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় নিজ শয়নকক্ষের মেঝে থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় তার বোন শাহানা রহমান কাজল বাদী হয়ে স্ত্রী নূরানী ও শাহাবুদ্দীন নাগরীসহ অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট থানায় মামলা করেন। এরপরই  নূরানী, বন্ধু নাগরী এবং গাড়ি চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সোমবার ওই মামলার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম ওয়ায়েজ কুরুনী খান চৌধুরী গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বাসার ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধারের আগের দিন বিকেল ৩টা ১৩ মিনিটের দিকে বাসায় গিয়েছিলেন শাহাবুদ্দীন নাগরী। প্রবেশের ৪ ঘণ্টা ৪ মিনিট পর (সন্ধ্যা ৭টা ১৭ মিনিটে) বেরিয়ে আসেন তিনি। একই ঘটনায় শাহাবুদ্দীনের মোবাইল ফোন নম্বরও চেক করে দেখা হচ্ছে। নিহত নুরুলের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার গুঞ্জন থাকলেও তা তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নিউ মার্কেট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মতুলুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় কবি নাগরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় উল্লেখিত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার জাগো নিউজকে বলেন, নিহতের স্ত্রী নুরানী ও বন্ধু নাগরীকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে কোনোভাবে মুখ খুলছেন না তারা। তবে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। রিমান্ড শেষে এ ব্যাপারে বোঝা যাবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, নাগরীর সঙ্গে নুরুল ইসলামের স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক চলছিল। নুরুল ইসলাম ব্যবসায়িক প্রয়োজনে  বাসায় বাইরে গেলেই হাজির হতেন নাগরী। দীর্ঘ সময় সেখানে কাটাতেন। 

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সম্প্রতি নাগরী বন্ধু  নুরুল ইসলামের স্ত্রীর জন্য ১২ লাখ টাকা দামের গাড়ি উপহারের তথ্যও আমরা পেয়েছি। সেই গাড়ির চালক সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। ওই হত্যাকাণ্ডে নাগরী ও স্ত্রী নুরানীর যোগসাজশ রয়েছে বলে ধারণা। তবে তদন্তে শেষে হত্যার মোটিভ জানা যাবে।

নিহত নুরুল ইসলামের অ্যাপার্টমেন্টের ব্যবস্থাপক বাবু কুমার স্বর্ণকার সাংবাদিকদের বলেন, বছরখানেক ধরে ওই বাসায় বসবাস করে আসছিলেন সন্তানহীন নুরুল ইসলাম। মাঝে হঠাৎই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি।  এরপর থেকে বিশ্রামে বেশি সময় থাকতেন তিনি। কোনো কারণে নুরুল ইসলাম বাইরে গেলে নাগরী এসে হাজির হতেন। নুরুল ইসলাম থাকতেও বাসায় আসতেন তিনি। নাগরীর সঙ্গে নিহতের স্ত্রীর পরকীয়ার গুঞ্জন আশপাশে ছড়িয়েছিল। নুরুল ইসলামের পরিবারকে একটি প্রাইভেটকার উপহার দেয়ার পর সে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। নুরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধারের আগের দিন সর্বশেষ ওই বাসায় নাগরীই এসেছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, শাহাবুদ্দীন নাগরী দেশের প্রথিতযশা একজন কবি ও সাহিত্যিক। নব্বইয়ের দশকে পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখে পাঠকগোষ্ঠীর কাছে সমাদৃত হন তিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক এ কর্মকর্তা কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সুরকার, গায়ক এবং নাট্যকার হিসেবেও পরিচিত। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন।

জেইউ/এসআর/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।