২০ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বেকায়দায় ইউজিসি


প্রকাশিত: ০৬:০০ এএম, ২৭ আগস্ট ২০১৪

বেসরকারি ২০ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বেকাদায় পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়কে কালো তালিকাভুক্ত এবং বাকি ৫টি বন্ধ করেও বাগে আনতে পারছে না ইউজিসি। বাধ্য হয়ে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তি না করাতে অভিভাবকদের সতর্ক করে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরপরও কোন কিছুতেই কোন কাজে আসছে না। এই বিশ্ববিদ্যালগুলো শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপন দিয়েই চলেছে।

১৩ই আগস্ট উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের ফল প্রকাশের পর এসব বিশ্ববিদ্যালয় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পত্রিকায় নানা চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থী টানার চেষ্টা করছে। প্রাইম ইউনিভার্সিটির একটি পক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ও ইউজিসি’র বিরুদ্ধেও বিজ্ঞাপন দিয়েছে। অবৈধ ক্যাম্পাস খুলে সনদ বাণিজ্য, অনুমোদনহীন না নিয়ে কোর্স ও কারিকুলামে পাঠ্যদান, আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে সনদবাণিজ্য, মালিকানা দ্বন্দ্ব, ট্রাস্টের বোর্ডে বিভক্তি ইত্যাদি কারণে এগুলোর বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা চলছে। সব মামলায় বিবাদী ইউজিসি।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সনদ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। যা পুরো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানকে ক্ষুণ্ন করছে। তাদের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে সরকার। তিনি জানান, কোন কিছু হলেই তারা আদালতে যায় এবং একটি স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। এখন আদালতে মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় সে জন্য সব মামলা এক কোর্টে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। গত শনিবার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানে দেশের ১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুত সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এগুলো দিয়ে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বিবেচনা না করার অনুরোধও করেন শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র সূত্র বলছে, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সনদ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম করছে এগুলোর পেছনে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ কারণে বারবার তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গিয়েও বেগ পেতে হয়েছে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে। সনদ বিক্রেতার বিরুদ্ধে এর আগে বাস্তবিক কোন উদ্যোগ না নিলেও কয়েক মাস আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে টিআইবি রিপোর্টের পর ঘুম ভাঙ্গে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র। বাধ্য হয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন পর্যন্ত দিয়েছে ইউজিসি। বিজ্ঞাপনে ইউজিসি বলছে, সনদ বিক্রি বন্ধ করতে শুধু ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় ভূমিকাই যথেষ্ট নয়। এই নীতি বর্জিত কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ ও ওই সব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। ইউজিসি’র কর্মকর্তারা বলছেন, ইউজিসি’র যে ক্ষমতা রয়েছে, তার মাধ্যমে সঙ্কট নিরসন  কোনভাবেই সম্ভব হবে না। ইউজিসি’র ক্ষমতায়নের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তর জরুরি।

সূত্র জানায়, নানা অনিয়মের অভিযোগে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে পত্র দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, দারুল ইহসান, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিবি ট্রাস্ট, সাউদার্ন, নর্দান ইউনিভার্সিটি, ইবাইস, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), কুইন্স ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি শিক্ষার মান নিশ্চিত নন ও সার্টিফিকেট বিক্রির মতো অনৈতিক ও গর্হিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির বিরুদ্ধে ইউজিসি’র মামলা চলছে। মালিকানা দ্বন্দ্ব ও ট্রাস্টি বোর্ডের বিভক্তি রয়েছে। এরপরও তারা হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ উদাহরণ প্রাইম ইউনিভার্সিটি। চলতি মাসে দেয়া ইউজিসি’র গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাস (মিরপুরের ২এ/১, নর্থ দারুস সালাম রোড মিরপুর ১ নম্বর বাদে) উত্তরাসহ সব ক্যাম্পাস অবৈধ। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত চিঠি দিয়েছে। মূল ক্যাম্পাস ছাড়া বাকি অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধ করতে ৪ঠা আগস্ট স্বরাষ্ট্র এবং ১৩ই আগস্ট পুলিশের আইজিপিকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। ইউজিসি’র গণবিজ্ঞপ্তিতে এই ঠিকানা ছাড়া ভর্তি না হতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু অন্য মালিক যিনি উত্তরায় বিএনএস শাখার মালিক দাবিদার, তিনি গত সপ্তাহ দেশের প্রধান কয়েকটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দাবি করেন ৮৭ বিএনএস সেন্টার, ৭ম ও ৮ম ফ্লোর উত্তরায় হলো প্রাইম ইউনিভার্সিটি মূল ক্যাম্পাস। মিরপুরের ক্যাম্পাসকে মূল ক্যাম্পাস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয়।
এছাড়া ইবাইস ইউনিভার্সিটির মালিক পক্ষ দু’টি ও ভিসি ও পরিচালনা পরিষদও দু’টি করে। প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কর্তৃপক্ষ বলে দাবি করছে। দুুই পক্ষই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা ও পরিচালনার বৈধ কর্তৃপক্ষ দাবি করে আদালতে গিয়েছেন। দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি সারা দেশে অবৈধভাবে প্রায় ৩ শতাধিক আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। রয়েছে মালিকানা দ্বন্দ্বও। ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করে রায়ও পেয়েছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করতে সুপারিশ করে। নানা রাজনৈতিক চাপে এটি বন্ধ হয়নি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত  নথি ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নিষ্পত্তি হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধ হচ্ছে না।


আউটার ক্যাম্পাস খুলে সনদ বাণিজ্যে আরও লিপ্ত রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব চিটাগাং (আইআইইউসি)। এই প্রতিষ্ঠানটি মামলার জোরে ঢাকায় ধানমন্ডিতে একটি ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। এর বাইরে চট্টগ্রামের বহদ্দার হাটেও একটি ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। রাজশাহীতে অবৈধ ক্যাম্পাস খুলেছে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া।
সূত্র জানায়, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির নামে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এক ব্যক্তি ক্যাম্পাস চালাচ্ছেন, তিনি এর আগে পিচব্লেন্ড নামে আরেকটি অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয় চালাতেন। সরকার পিচব্লেন্ড বন্ধ করে দেয়ার পর এখন আবার প্রিমিয়ার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছেন। এর বাইরে রাজশাহী অঞ্চলে ‘মদিনাতুল উলুম বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে আরও একটি ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম  চালাচ্ছে। সমপ্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে এটি বন্ধ করতে। সূত্র : মানবজমিন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।