বাসে উঠলেই ১৫ টাকা!
রাজধানীজুড়ে যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোতে সিটিং সার্ভিসের নামে চলছে ‘চিটিং সার্ভিস’। এ চিটিংয়ের ক্ষেত্রে অন্য পরিবহনগুলো থেকে এগিয়ে আছে রাইদা। পোস্তগোলা-উত্তরা রুটে চলাচলরত পরিবহনটিতে উঠলেই যাত্রীদের গুনতে হয় ১৫ টাকা। সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে এ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী থেকে মুগদা স্টেডিয়াম পর্যন্ত তুরাগ ও ছালছাবিল পরিবহনে ভাড়া নেয়া হয় পাঁচ টাকা। নিয়মিত এ রুটে যাতায়াত করেন মো. সাইফুল ইসলাম। শনিবার সকালে যাত্রাবাড়ী থেকে মুগদা স্টেডিয়ামে আসতে রাইদা পরিবহনে ওঠেন। কিছু দূর আসার পরই পরিবহনের সুপারভাইজার ভাড়া চান। সাইফুল পাঁচ টাকা ভাড়া দেন। এতে উত্তেজিত হয়ে সুপারভাইজার ১৫ টাকা ভাড়া দাবি করেন।
‘ভাই আমি তো যাত্রাবাড়ী থেকে উঠেছি। স্টেডিয়ামের সামনে নামব। ১৫ টাকা দেব কেন? তুরাগ, ছালছাবিল সবাইতো পাঁচ টাকা ভাড়া নেয়। আমি প্রতিদিন এ রাস্তায় যাতায়াত করি’- রাইদা পরিবহনের সুপারভাইজারকে উদ্দেশ্য করে বলেন সাইফুল।
সুপারভাইজার বলেন, ‘তাহলে ওই গাড়িতেই যান। আমাদের গাড়িতে উঠলেই ১৫ টাকা ভাড়া দেয়া লাগবে। এটা সবাই জানে। আপনাকে তো আমি জোর করে গাড়িতে তুলিনি, আপনি নিজেই উঠেছেন।’
সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের। মো. মিন্টু পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাই আমাদের মালিকপক্ষ যে ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে আমরা তাই আদায় করছি। কিছু দূর পরপর আমাদের চেকার আছে। যাত্রীদের কাছ থেকে কম ভাড়া নিলে বাকি টাকা আমাদের পকেট থেকে দিতে হবে।’
রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করা হয়েছে- এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই আগে যেহারে ভাড়া নিতাম, আজ সেহারে ভাড়া নিচ্ছি। মালিক যদি সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে কম ভাড়ায় চলাচল করতে বলেন আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মালিকের কাছ থেকে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমাদের কিছুই করার নেই।’
অন্য সিটিং সার্ভেসগুলো সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা নেয় আপনারা ১৫ টাকা নিচ্ছেন কেন- এমন প্রশ্ন করা হলে মিন্টু বলেন, ‘অন্যদের থেকে আমাদের সার্ভিস কিছুটা ব্যতিক্রম। আমরা দাঁড় করিয়ে কোনো যাত্রী নেই না। এ কারণে আমাদের ভাড়া একটু বেশি। কিন্তু সার্ভিস অন্যদের থেকে অনেক ভালো।’
রাইদাসহ রাজধানীজুড়ে সিটিং সার্ভিসের নামে চলা অসংখ্য পরিবহন এভাবে যাত্রীদের পকেট কাটছে। কিন্তু মোটরযান আইন অনুযায়ী সিটিং সার্ভিস বলে কিছু নেই। তবে যাত্রীবাহী পরিবহন বাস ও মিনিবাস শ্রেণিতে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। চালকের আসনসহ যে পরিবহনে সর্বোচ্চ ৩১টি আসন থাকবে তা মিনিবাস হিসেবে বিবেচিত হবে। আর ৩১টির বেশি আসন থাকলে তা বাস হিসেবে বিবেচিত হবে।
পরিবহন মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই সঙ্গে বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়ার হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সরকার থেকে মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকা এবং বাসের ক্ষেত্রে সাত টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু শুরু থেকেই সরকারের এ নির্দেশনা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে সিটিং সার্ভিসের নামে চলা পরিবহনগুলো।
সিটিং সার্ভিসের পরিবহনগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ভাড়া হিসেবে ১০ টাকা বা এরও বেশি আদায় করছে। অথচ পরিবহনে যাত্রী তুলছে লোকাল পরিবহনের মতো। প্রায় প্রতিটি সিটিং সার্ভিসেই একাধিক যাত্রীকে দাঁড় করিয়ে নেয়া হয়। অনেক সময় লোকাল পরিবহনের মতো গাদাগাদি করেও যাত্রী তোলা হয়।
অথচ ভাড়া বাড়ানোর সময় সরকারের যে শর্তগুলো ছিল এর মধ্যে অন্যতম লোকাল পরিবহনগুলো ৮০ শতাংশ আসন পূর্ণ হলেই চলাচল করবে। তবে এটি শুধু শর্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা রাজধানীর পরিবহগুলোতে উঠলেই বোঝা যায়।
লোকাল পরিবহন তো দূরের কথা সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রীদের পকেট কাটা পরিবহনগুলোও ৮০ শতাংশ আসন পূর্ণ হলেই চলাচল করে না। আর লোকাল পরিবহনগুলোতে অফিস টাইমে সব সময় বাদুরঝোলা হয়ে যাত্রীদের চলাচল করতে দেখা যায়।
এমএএস/এমএআর/জেআইএম