রাজধানীর বুকে যেন সৈকতের ছোঁয়া
বসন্তের বিদায় বেলার সুর লহরি বেজেছে প্রভাতের উষা লগ্নেই। আপন মহিমায় প্রকৃতিকে অপরূপ রূপে সাজিয়ে বসন্ত চলে গেছে চৈত্রসংক্রান্তির মধ্য দিয়ে। সবুজের খেলা চলছে প্রকৃতিজুড়ে। সবুজের এ খেলা এখন রাজধানীর হাতিরঝিলেও। শুধু সবুজই নয়, নানা রকম ফুলের দেখাও মিলছে এখন হাতিরঝিলে।
সবুজের বিশাল প্রান্তর ঝিলের দু’ধারে। সুবুজে মেলানো ঝিলের পানি। যেন কোনো ঘন জঙ্গলের বুক ছিঁড়ে সাগর পানে ছুটে চলা নদীর হাতছানি!
গ্রীষ্মের দাবদাহ বইছে বৈশাখের প্রথম প্রহর থেকেই। ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ট। তবে নব উদ্যামে মেতেছে যে মন, তা কি গরমে নিস্তেজ হতে পারে? প্রাণের উচ্ছ্বাস মিলেছে প্রাণ রাজধানীর হাতিরঝিলে।
বৈশাখের বিকেলে ঝিলপাড়ে তিল ধরার ঠাঁই নেই। হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখোরিত নয়াভিরাম হাতিরঝিল। যত দূর চোখ যায়, তাতে শুধুই মানুষের দেখা পায়। ঝিলের এফডিসি মোড় থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত পুরো আঙ্গিনা মানুষে মানুষে ঠাসা।
বর্ষবরণে আয়োজনে অংশ নিতে রাজধানীবাসী ঘর ছেড়েছে কাক ডাকা ভোরে। রমনার বটমূল, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরে ঘুরে তারা বড়ই ক্লান্ত এদিন। দুপুরের পর থেকেই ক্লান্তি দূর করতে হাতিরঝিল যেন হাতছানি দিতে থাকে।
আর তাতে সাড়া দেন বিনোদনপ্রেমী মানুষেরাও। রোদের তেজ কমতে না কমতেই জনসমুদ্রে রূপ নেয় ঝিলের সমস্ত প্রান্তর। কেউ স্বজনের হাত ধরে, কেউ বা দল বেঁধে ভিড়তে থাকে ঝিল পাড়ে।
বৈশাখী সাজ আর নানা আয়োজনে দু’পাশের রাস্তা যেন গ্রাম্য মেলায় রূপ নেয়। অনেকেই ক্লান্ত শরীর মেলে দেন সবুজ ঘাসে। কেউ আবার গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে খানিক জিরিয়ে নেন। চলছে সমসূরে, সমআনন্দে বর্ষবরণের নানা গানও।
মোবাইল ক্যামেরায় সেলফি তোলার ধুমও পড়েছে হাতিরঝিলে। কেউ সংযোগ সেতুতে দাঁড়িয়ে, অনেকে আবার ঝিলের পানিতে মিলিয়ে নানা ঢংয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত।
বিকেলের সূর্যের আলো যেন কোনোভাবেই হারিয়ে না যায়, আর তার জন্যই ছবি তোলার এতো আয়োজন।
বসন্তের উদাস করা হাওয়া মিলছে গ্রীষ্মের এ বিকেলেও। সে হাওয়ায় ঢেউ তুলছে ঝিলের বুকে। ঢেউ এসে আঁচড়ে পড়ছে দুই তীরে। আবার সে ঢেউয়ে ঝড় তুলছে ঝিলে চলা ওয়াটার বাস আর স্পিড বোডগুলোও।
ঢেউ আর সূর্যের কিরণ মিলে রূপা ফলছে হাতিরঝিলে। যেন কোনো সমুদ্র সৈকতের ছোঁয়া রাজধানীর হাতিরঝিলে!
রাজধানীর বর্ষবরণে শরিক হতে গাজীপুর থেকে এসেছেন আবু তালহা শামীম। সঙ্গে নববধূ কেয়াও। বললেন, ‘হাতিরঝিলের এমন রূপ বিশ্বাস করতে পারছি না। সৈকতের আনন্দ মিলছে হাতিরঝিলে! ঘুরে ঘুরে বেশ ক্লান্ত ছিলাম। কিন্তু এখানে এসে সমস্ত ক্লান্তি উবে গেছে।’
এএসএস/এমএমএ/পিআর