জাতীয় কবির ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ


প্রকাশিত: ০২:৫৮ এএম, ২৭ আগস্ট ২০১৪

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ৩৮ বছর আগে ১৯৭৬ সালের এই দিনে (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) ঢাকায় তৎকালীন পিজি হাসপাতালে এই মহান কবির জীবনাবসান ঘটে। কাজী নজরুল ইসলাম প্রেমের কবি, বিরহ-বেদনা ও সাম্যের কবি। বাংলা সাহিত্য-সঙ্গীত তথা সংস্কৃতির প্রধান পুরুষ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধুমকেতুর মত আঘাত হেনে জাগিয়ে দিয়েছিল ভারতবাসীকে। তিনি পরিণত হন বিদ্রোহের কবিতে। আজও তার নানা ধরনের লেখার মাঝ থেকে বিদ্রোহের পংক্তিমালা বাঙালির হূদয়ে অনাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দুন্দুভি বাজিয়ে চলে। তার কবিতা ‘চল চল চল’ বাংলাদেশের জাতীয় রণসঙ্গীত।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘বিদ্রোহী কবি’ কাজী নজরুল ইসলাম বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতা থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে প্রবল ও ফলপ্রসূ। তাই তিনিই রবীন্দ্রোত্তর সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ। নজরুল তার কবিতা, সঙ্গীত, উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখনী ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পরাধীন ভারতেও একইসাথে অবিভক্ত বাংলাদেশে সামপ্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্য ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও প্রবল কণ্ঠ ছিলেন। ইংরেজ সরকার তার গ্রন্থ ও রচনা বাজেয়াপ্ত করেছে বারবার এবং কারাদণ্ড দিয়েছে। কারাগারেও বিদ্রোহী নজরুল টানা চল্লিশ দিন অনশন করে বিদেশি সরকারের জেল-জুলুমের প্রতিবাদ করেছেন।

কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বাংলা ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬/১৮৯৯ইং, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। পিতার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজী পালোয়ানের মাজারে খাদেম এবং মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাজ করেছেন। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যে ইসলামী ঐতিহ্যের সার্থক ব্যবহারে এ সম্পৃক্ততা খুব ফলপ্রসূ হয়েছে।

কাজী নজরুলের গান বাংলা সঙ্গীতের ও সঙ্গীত-সাহিত্যের ইতিহাসে সবচেয়ে সৃজনশীল, মৌলিক, বাণী ও সুর সঙ্গীতের প্রধান সৃষ্টি। তাই শুধু কবিতায় নন, আধুনিক বাংলা সঙ্গীতের নজরুল পথিকৃত্ ও সর্বপ্রধান প্রতিভা।
১৯৭২ সালের ২৪ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে এবং ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে ঘোষণা দেয়। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন।

তার জৈবিক আয়ুস্কাল ৭৮ বছর হলেও ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন।

দিবসটি উপলক্ষে কর্মসূচি
প্রতিবারের মতো এবারও দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। আলোচনা সভা, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। বাদ ফজর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআন খানি, শোভাযাত্রা, মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেয়া পাঠ করা হবে। এছাড়া সকাল ৭টায় ‘অপরাজেয় বাংলা’র পাদদেশে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ জমায়েত হবেন। সেখান থেকে তারা সকাল ৭-১৫ মিনিটে উপাচার্যের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির মাজারে গমন, পুস্পঅর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে উপাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন বাংলা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অফিসার ও কর্মচারীসহ সকলকে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
নজরুল একাডেমী

নজরুল একাডেমী তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। বুধবার সকাল ৭টায় কবির মাজারে পুস্প অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হবে এবং নজরুল একাডেমী বিদ্যালয়ে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার নজরুল একাডেমী জেলা শাখাসমূহ কর্তৃক দেশের প্রতি জেলা, উপজেলায় অবস্থিত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি অফিস, দোকানপাট ও জনসাধারণের মধ্যে জাতীয় কবির সৃষ্টিকর্মের চর্চা, কবির মর্যাদা ও মূল্যায়ন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি কর্মসূচির উদ্বোধন ও একইদিনে বাস্তবায়ন উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় গমন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শুরু। মগবাজার গার্লস হাইস্কুলে সকাল ৮:৩০টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন কবি নাতনি বেগম খিলখিল কাজী।

শুক্রবার সমাপ্তি দিবসে আলোচনা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান সন্ধ্যা ৬:৪৫টায় নিজস্ব মিলনায়তন, নজরুল ভবন, বেলালাবাদ, মগবাজারে অনুষ্ঠিত হবে। ‘নজরুল উত্সব’ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও অতিথি শিল্পীবৃন্দ সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। অনুষ্ঠান সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আওয়ামী লীগ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করবেন।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে সকাল ৭টায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।