খালেদা জিয়া চোখ থাকিতে অন্ধ : প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত: ০৫:৫৬ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রীর দশা হয়েছে এমন যে উনি চোখ থাকিতে অন্ধ। আর যে চোখ থাকিতে অন্ধ তার কপাল মন্দ। জনগণকে নাকি অন্ধকারে রেখে সমঝোতা স্বাক্ষর করেছি খালেদা জিয়ার এ কথাটি সত্য নয়। আমরা চুক্তি ও সমঝোতা করার আগে প্রত্যেকটি বিষয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অনুমোদন নিয়েছি। সংসদে আলোচনা করেছি।

বুধবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকের সূচনা বক্তব্য শেষে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। এ বৈঠকে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে না। কারণ আমি ধর্ম মেনে চলি। তাই এটা নিয়ে রাজনীতি করার দরকার হয় না।

শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রীকে প্রশ্ন করে বলেন, চীনের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলেন- সে চুক্তি কীভাবে করলেন? সেটা কি সংসদে আলোচনা হয়েছিল? মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উঠেছিল? নাকি কেউ দেখেছিল? কেউ দেখেনি। ওনার মতো ‘চুরিচুপি চুক্তিচোক্ষা’ করি নাই। তার মুখেই আমাদের শুনতে হয়, অন্ধকারে রেখে চুক্তি করেছি। আমরা ভারত যাওয়ার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে সব বলে গেছেন। অন্যদিকে চুক্তির পর আমরা যৌথ বিবৃতি দেই। সেখানেই সব পরিষ্কার করা হয়েছে। সব উল্লেখ করা হয়েছে। ওনার (খালেদা) মতো চুক্তিচোক্ষা করিনি। কেউ যদি চোখ থাকিতে অন্ধ হয়, তাহলে আপনার কিছু বলার  নাই।

শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তার পানি আনা তো দূরের কথা, ১৯৯১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় তখন বিএনপি নেত্রী ভারত সফরে গিয়েছিলেন। সফরে গিয়ে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার কথা ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি। চাওয়ার মতো সাহসও তার ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা-গঙ্গা দূরের কথা আমাদের স্থলসীমা যে চুক্তি করে গিয়েছিলেন জাতির পিতা- সেই স্থলসীমার সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। খালেদার কাছে প্রশ্ন তার স্বামী জিয়াউর রহমান-এরশাদ ক্ষমতায় ছিল তারা কেন স্থলসীমা নিয়ে কথা বলেননি? তোলার সাহসই পায়নি। সেটাও আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। এটা আমাদের কূটনৈতিক সাফল্য। খালেদা জিয়া ব্যর্থতার কি জবাব দেশবাসীর কাছে দেবে? সমুদ্রসীমা নিয়েও একই অবস্থা। বিএনপি নেতাদের বলি-আপনারা কি কখনও সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন? পদলেহনে এতই ব্যস্ত ছিল যে ন্যায্য হিস্যা নিয়ে কথা বলতে পারেনি।

তিনি বলেন, আমি ভারতে গিয়েছিলাম ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি আমাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে এসেছিলেন। ভারতে প্রতিটি কর্মসূচি সফলভাবে হয়েছে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সৈন্য জীবন দিয়েছিলেন তাদেরকে সান্ত্বনা দেই। ভারতে থাকাকালীন অবস্থায় ২৪টি এমওইউ ১৩টি এগ্রিমেন্ট সই করি। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যবসায়ীরা গিয়েছিলেন। ভারতের ব্যবসায়ীরা এখানে বিনিয়োগ করবে। আমরা বিদ্যুৎ আনতে পারবো। রোমানী থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ডিজেল আনতে পারবো। এলএমজির মাধ্যমে গ্যাসের সমস্যার সমাধান করবো। পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস নিয়ে আসবো। সাইবার সিকিউরিটিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমঝোতা স্বাক্ষর করি। উন্নয়নের জন্য ভারত আমাদেরকে মোটা অংকের অর্থ ধার নিয়ে এসেছি। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে পাঁচ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল। তা না হলে খুনি মোশতাক ক্ষমতা গ্রহণের একদিনের মাথায় তাকে কেন সেনাপ্রধান বানায়। জিয়াউর রহমানও একইভাবে অবৈধভাবে সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করে, তাদের রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় দখল করেছিল। ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসারকে হত্যা করে। নিজের ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য সেনাবাহিনীর ৫৬৫ জন অফিসার ও দুই হাজার সৈনিককে হত্যা করেছিল জিয়াউর রহমান। ১৯ বার ক্যু হয়েছিল। প্রতিরাতে কারফিউ জারি করা হতো। নিজেকে আগে সেনাপ্রধান তারপর রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। আইয়ুব খান যেভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল জিয়াউর রহমান সেই পদাঙ্ক অবলম্বন করে ক্ষমতা দখল করে। নির্বাচনী প্রহসন। হ্যাঁ-না ভোট-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। জনগণের ভোট করে নিয়ে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখে। অবৈধকারী ক্ষমতা দখলকারীর হাতে তৈরি করা বিএনপি জনগণকে কী দিতে পারে?

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী তিস্তার পানি আনতে পারিনি কেন জানতে চেয়েছেন? খালেদা জিয়ার কাছে আমার প্রশ্ন ক্ষমতায় থাকতে কেন তিস্তার পানি আনতে পারেননি? আগে জাতির কাছে সেই জবাব দিন। ভারতের খোশামতি, তোসামতিতে ব্যস্ত ছিল যে পানি চাওয়ার সাহসও তার ছিল না।

এফএইচএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।