মেয়েদের বোঝা ভাববেন না : শারমিন


প্রকাশিত: ০৩:২০ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৭

‘মেয়েদের বোঝা ভাববেন না। অল্প বয়সে তাদের বিয়ে দেবেন না। মেয়েদেরও পড়ালেখার সুযোগ দিন। তারাও অনেক বড় হবে।’ দেশের সব বাবা-মায়ের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক সাহসী পুরস্কারপ্রাপ্ত শারমিন আক্তার (১৭)।

বুধবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ইএমকে সেন্টারে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান সাহসী এ কিশোরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের প্রেস সেকশনের প্রধান মেরিনা ইয়াসমিন ও প্রেস অ্যাসিস্ট্যান্ট নুসরাত হোসেন।

মায়ের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিয়ে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ (আইডব্লিউওসি) অ্যাওয়ার্ড-২০১৭ এ ভূষিত হন শারমিন। গত ২৯ মার্চ ওয়াশিংটনে এক আড়ম্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের হাত থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করে ৬ এপ্রিল দেশে ফিরেছেন ঝালকাঠির এ কিশোরী।

নিজ এলাকা ঝালকাঠির উদাহরণ দিয়ে শারমিন জানান, ভালো ছেলে পেলেই বাবা-মা মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন। তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শারমিন বলেন, মেয়েদের বোঝা না ভেবে তাদের পড়ালেখার সুযোগ দিন। তারাও একদিন বড় হবে।

মেয়েদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে শারমিন বলেন, ‘অসহায় না ভেবে তোমরা নিজেদের প্রতি বিশ্বাস রাখবে। প্রতিবাদ করবে। তাহলে নিজেরাই নিজেদের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে একদিন বড় মানুষ হতে পারবে।

শারমিন জানান, মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন তার মা। রাজি না হওয়ায় তার ওপর চলে নির্যাতন। সেখান থেকে পালিয়েও রেহাই না পেয়ে আইনের সাহায্য নেন শারমিন। সাংবাদিকদের সাহায্যে সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে মা ও যার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।

সেদিনের সেই নির্যাতন আমাকে প্রতিবাদ করার সাহস যুগিয়েছে জানিয়ে শারমিন জানান, কয়েক মাসের মধ্যেই সেই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। পরে আত্মসমর্পণ করেন শারমিনের মা। এরপর কয়েক মাস জেল খাটার পর তারা উভয়ই এখন জামিনে আছেন বলে জানিয়েছেন শারমিন।

ওই ঘটনার পর শারমিনের মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। শারমিনের বাবা কবির হোসেন সৌদি আরব প্রবাসী। তাই শারমিন এখন তার দাদি দেলোয়ারা বেগমের সঙ্গে থাকেন। নাতনির সঙ্গী হয়ে তিনিও সংবাদ সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

সাহসিকতার পুরস্কার পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে শারমিন বলেন, এ পুরস্কারে আমি ভীষণ সম্মানিত বোধ করছি। এ অ্যাওয়ার্ড আমার জন্য নয়, দেশের সব মেয়ের জন্য।
fffশারমিন বলেন, ছেলেরা ভাবে তারা বেশি শক্তিশালী। কিন্তু আসলে তা নয়। মেয়েরা বিপদে পড়লে পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ সাহায্য করবে। পুলিশ না করলে শিক্ষক, সহপাঠী বা কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেই।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে শারমিন জানান, সেখানে গিয়ে আমি এই পুরস্কারের অর্থ বুঝতে পারি। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আরও ১২ জন সেখানে আমার মতো পুরস্কার নিতে যান। তারা আমার কথা জানতে চান। আমি আমেরিকার হোয়াইট হাউজ ও সংসদে গেছি। আমেরিকানদের সঙ্গে ডিনার করেছি। আমার খুব ভালো লেগেছে।

নিউইয়র্কের একটি স্কুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কথা জানাতে গিয়ে শারমিন জানান, ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা আমার কাছে জানতে চায়, তাদের বাল্য বিবাহ হলে আমি তাদেরকে সাহায্য করব কি না। আমি বলি, অবশ্যই করবো। যেটুক পারি সাহায্য করবো।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে মঙ্গলবার মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাজধানীর লালবাগ মডেল হাইস্কুলেও গিয়েছিলেন শারমিন।

তিনি জানান, স্কুলটির প্রায় শতাধিক মেয়ে আমাকে বলেছে, তারা পড়া শেষ না করে বিয়ে করতে চায় না। জোর করে বিয়ে দিতে চাইলে তারাও আমার মতো প্রতিবাদ করবে।

এই স্কুলটিতে বাবা-মা’দের ডেকে শিক্ষকরা বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে অবহিত করেন জানিয়ে শারমিন বলেন, প্রতিটি স্কুলেই এভাবে অভিভাবকদের ডেকে বিষয়টি বোঝানো উচিত।

মেরিনা ইয়াসমিন জানান, মাত্র ১৫ বছর বয়সে সংগ্রাম করেছে শারমিন, তাতে সে সফলও হয়েছে। শারমিন এখন দেশের অন্য কিশোরীদের কাছে সাহস ও অনুপ্রেরণার নাম।

তিনি জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত বিশ্বের ৬০টি দেশের শতাধিক নারীকে ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ স্বীকৃতি দিয়েছে। শারমিন আক্তারসহ বাংলাদেশের তিনজন নারী এ পুরস্কার অর্জন করেছে।

জেপি/এএইচ/ওআর/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।