সভার আগেই ১২০০ গাছ কাটার প্রস্তুতি


প্রকাশিত: ০২:০৪ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

সিলেট বন বিভাগের পক্ষ থেকে প্রায় ২২ বছর আগে ১২০০ বৃক্ষরোপণ করা হয় সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে। এগুলো পারাইরচকের সবুজ হিসেবে চিহ্নিত হয়। ২২ বছর আগের শিশু বৃক্ষগুলো এখন অনেক বড় হয়েছে। গাছগুলোতে হাজার-হাজার পাখি বাসা বেঁধেছে। কিন্তু, সড়কের দুই পাশের মনোরম এই গাছগুলো কাটার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে।

সড়কের দুই পাশের সারিবদ্ধ গাছগুলোর কারণে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পরিবেশ এখন অন্যরকম। এলাকার পরিবেশও সবুজ ও নির্মল। কিন্তু এটি সামাজিক বনায়ন। তাই কেটে ফেলতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বন বিভাগ।

ইতোমধ্যে সাড়ে ৮০০ গাছ চিহ্নিত করে নম্বর ফেলা হয়েছে। বাকি গাছগুলোর নম্বর ফেলা বৃষ্টির কারণে সাময়িক বন্ধ রয়েছে। তবে ১২০০ গাছ একসঙ্গে কাটার বিপক্ষে স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবেশবিদরা। তাদের মতে, একসঙ্গে এত গাছ কাটলে যেমন পরিবেশর বিপর্যয় ঘটবে, তেমনি গাছে বসবাসকারী পাখিরা হারাবে তাদের বাস স্থান।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের দুই পাশে পারাইরচক থেকে খালেরমুখ মাজার এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১২০০ গাছ রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে। ওই ১২০০ গাছের মধ্যে সাড়ে ৮০০ গাছে নম্বর ফেলা হয়েছে। ছোট গাছে নম্বর ফেলা হয়নি, পাশাপাশি কিছু গাছে ক্রস চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। বন বিভাগ ওই গাছগুলো চিহ্নিত করতে দায়িত্ব দিয়েছে বন সম্প্রসারণ নার্সারি শেখঘাট অফিস কর্তৃপক্ষকে।

শেখঘাট বন সম্প্রসারণ নার্সারি অফিস সূত্র জানায়, ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ সালে সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে সামাজিক বনায়ন করা হয়। নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ হলে সামাজিক বনায়নের অধিনের গাছ কেটে ফেলা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পারাইরচক থেকে খালেরমুখ মাজার পর্যন্ত প্রায় ১২শ গাছ কেটে ফেলার জন্য তাদেরকে গাছ চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়।

বন সম্প্রসারণ নার্সাারি শেখঘাট অফিসের প্লান্টেসন সহায়ক (পিএম) রুহুল আমিন ও আব্দুর রব জাগো নিউজকে জানান, ওই গাছগুলো চিহ্নিত করে তারা তালিকা তৈরি শেষে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করবেন। এরপর টেন্ডার হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলেই গাছগুলো কাটার কাজ শুরু হবে।

তারা আরো বলেন, গাছগুলো পরিপক্ক, তাই এগুলো কেটে বিক্রি করে দেয়া হবে। পাশাপাশি গাছগুলো কাটার পর প্রতি এক কিলোমিটার রাস্তার পাশে ১০০০ গাছ লাগানো হবে। এভাবে আবারও রাস্তার দুই পাশে সমাজিক বনায়ন করা হবে।

সিলেট বন বিভাগের অফিস সহকারী আবুল হাসেম জাগো নিউজকে জানান, যে গাছগুলো পরিপক্ক হয়নি সেগুলো ও ছোট গাছগুলো কাটা হবেনা। কিছু গাছ পরিপক্ক হয়ে ফেটে যাচ্ছে। গাছগুলো এখন বিক্রির উপযোগী তাই গাছ চিহ্নিত করা শেষে টেন্ডার কাজ শুরু হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে গাছ বিক্রি করা হবে। বিক্রি শেষে উপকারভোগী পাবেন ৫৫ ভাগ, সড়ক ও জনপদ পাবে ২০ ভাগ, বন বিভাগ পাবে ১০ ভাগ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ পাবেন ৫ ভাগ এবং ট্রি ফার্মিং ফান্ড পাবে ১০ ভাগ।

তিনি বলেন, যে গাছগুলো কাটা হবে এর মধ্যে আকাশি, রেইন্ট্রি, কড়ই, মন্ডিআম, অর্জুন, মেহগনী, শিশুসহ বিভিন্ন জাতের গাছ রয়েছে। ওই গাছ কেটে আকাশমনী, রেইন্ট্রি, মেহগনী, জারুল, অর্জুন, কদম, গামার, বকাইনসহ বিভিন্ন জাতের স্বল্পমেয়াদী গাছ লাগানো হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম জেলা বন ও পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির একজন সদস্য। তিনি জানান জাগো নিউজকে, কমিটির সভায় উপস্থাপনের আগেই গাছ কাটার প্রস্তুতি আসলে বিস্ময়কর। এসব কারণেই বন বিভাগ এ কমিটির সভায় তাকে ডাকে না।

তিনি আরো বলেন, গাছ কাটার পক্ষে আমরা কখনই না। কারণ গাছ কাটলে পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়। আর একসাথে ১২০০ গাছ কাটলে এলাকার পরিবেশ হুমকির মুখেই পড়বে।

এমজেড/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।