মানুষের মাথায় মানবভ্রূণ!


প্রকাশিত: ০৬:২২ এএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

চোখের সমস্যা ছিল না, কিন্তু সবই ঝাপসা দেখছিলেন তিনি। কানেরও সমস্যা ছিল না, অথচ ঠিক মতো শুনতে পাচ্ছিলেন না। আর সেই সঙ্গে মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা। ২৬ বছরের মেয়ের কী হয়েছে, ভেবে কূল-কিনারা করতে পারছিলেন না বাবা-মা। মাথায় হাত চিকিৎসকদেরও।

স্ক্যান করে দেখা যায়, ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় শিক্ষার্থী যামিনী কারানামের মাথার ভিতরে মটর দানার মতো কিছু একটা হয়েছে। চিকিৎসকেরা প্রথমে ধরেই নিয়েছিলেন টিউমার। কিন্তু বিস্ময়ের তখনো ছিল বাকি। অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে ডাক্তাররা দেখেন, কোথায় টিউমার? মটর দানার মতো অতো ছোট জিনিসও নয়। বরং মাথার মধ্যে রয়েছে হাড়-দাঁত-চুল-সহ একটা অপরিণত ভ্রূণ!

যামিনীর ঝাপসা দেখা, খেতে না পারা, কানে কম শোনা-এ সবের সূত্রপাত হয়েছিল গত বছরের শেষের দিকে। ভারতের হায়দরাবাদের তরুণীটিকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে কী করা যায়, ঠিক করে উঠতে পারছিলেন না আমেরিকার ডাক্তাররা। মাথার ঠিক মধ্যিখানে পিনিয়াল গ্ল্যান্ডে টিউমার হয়েছে। অস্ত্রোপচার করা বেশ ঝুঁকির। এ দিকে, যন্ত্রণা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

অস্ত্রোপচার করা ঠিক হবে কি না, এই দোলাচলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতেই হঠাৎ ডাক্তার এইচ শাহিনিয়ানের সন্ধান পায় যামিনীর পরিবার। ‘কি-হোল’ অস্ত্রোপচারের জন্য সুনাম আছে শাহিনিয়ানের। এর বিশেষত্ব হচ্ছে, মাথার খুব সামান্য অংশ ফুটো (কি-হোল) করে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে পৌঁছে যাওযা। আর তার পর ছুরি-কাঁচি চালিয়ে টিউমারটিকে বাদ দেওয়া।

যামিনীর মাথার পিছন দিকে একটা ছোট্ট গর্ত করেন শাহিনিয়ান। নিপুণভাবে একটা এন্ডোস্কোপ ঢুকিয়ে দেন খুলির মধ্যে। আর তার পরই চমক। শাহিনিয়ান দেখেন, টিউমার নয়। রয়েছে একটি ‘টেরাটোমা’ (এমন টিউমার, যার মধ্যে রয়েছে কলাস্তর বা টিস্যু। যা সাধারণত কোনো অঙ্গে থাকে)। চুল-দাঁত-হাড়ের মাংসপিণ্ড।

চিকিৎসকরা মনে করছেন, টেরাটোমাটি আসলে ওই তরুণীরই যমজ বোনের ভ্রূণ। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন যা কোনও ভাবে তাঁর শরীরে চলে যায়। আর তার পর, গত ২৬ বছর ধরে গোপনে রয়ে যায় যামিনীর দেহে।

তার কর্মজীবনে হাজার আষ্টেক অস্ত্রোপচার করেছেন শাহিনিয়ান। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার টেরাটোমা-র মুখোমুখি হলেন। এ বারও সফল হয়েছেন তিনি। মাংসপিণ্ডটি বাদ দেওয়া হয়েছে যামিনীর মাথা থেকে। চিকিৎসকদের আশা, এ বার ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবেন মেয়েটি।

যাকে ঘিরে এতো হইচই, কী বলেছেন সেই যামিনী? মুচকি হেসে বললেন, আমার দুষ্টু যমজ বোনটা গত ২৬ বছর ধরে খুব জ্বালিয়েছে।

বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।