দুই বছর হলো আমার মা নেই


প্রকাশিত: ০৩:৩৫ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

২০১৪ সালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়ার হোসেনপুরে গড়ে ওঠে অর্কা (ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন) হোম। দুস্থ-হতদরিদ্র মানুষের কল্যাণে গোড়া থেকেই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করতে শুরু করে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে এই হোমেই রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে বাবা- মা হারানো ৬ জন শিশুকে এনে রাখা হয়।

পাঁচ বিঘা জমির একাংশে শিশুদের জন্য ২০ শয্যার আবাসিক হোস্টেল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।
 
রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর দুই বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু, স্নেহময়ী জননীর কথা মনে হলেই বিষন্ন হয়ে ওঠে এই শিশুদের মন। প্রিয় মানুষগুলোর কথা মনে পড়লে দুঃখ-কষ্টে যেন বুকের পাঁজর ভেঙে যায় তাদের। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার হোসেনপুর অর্কা হোমে গিয়ে দেখা হয় ওই শিশুদের সঙ্গে। রংপুরের পীরগাছার আল আমিন (১১) কিছুতেই ভুলতে পারেনি তার মার কথা। রানা প্লাজার নীচে চাপা পড়ে তাকে একলা রেখে স্বামী পরিত্যক্ত মা ফাতেমা বেগম চলে যান না ফেরার দেশে। সে জানায়, দুই বছর হলো আমার মা নেই। শুধু আমাকে মানুষ করার জন্য মা গার্মেন্টে চাকরি করতো।

রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে আল আমিনের মতো অকালেই মা হারা হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদি উপজেলার স্বপন মিয়া (১১), গাইবান্ধা সদর উপজেলার আলিফ হাসান (১১), গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুরের শিহাব মিয়া (১২) ও জামালপুর সদর উপজেলার সৌরভ হাসান (৫)।

এছাড়াও ওই হোমে দেখা হয় ছোট্ট শিশু আরিফুল মিয়ার (৫) সঙ্গে। রানা প্লাজার নীচে চাপা পড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তার মা সাদুল্যাপুর উপজেলার আফরোজা বেগম। বাবা মান্নান মিয়া তার মা`কে তালাক দেন। নানা বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুুর উপজেলার কান্তানগরে থাকতো সে। কিছুদিন আগে দিনমজুর নানা আরিফুলকে ওই হোমে রেখে যান।

মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত এসব শিশুকে পরম মমতায় ঠাঁই করে দিয়েছে অর্কা হোম। বিজিএমইএর সঙ্গে যোগাযোগ করে রানা প্লাজায় স্বজনহারা শিশুদের এখানে নিয়ে আসা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের আরো কয়েকজন শিশুকে এই হোমে নিয়ে আসতে চেষ্টা করছেন তারা।

অর্কা হোমসের ভাইস প্রিন্সিপাল শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, অসহায় এসব শিশুদের কথা চিন্তা করে নির্মিত হয় অর্কা হোমস। এখানে এসব শিশুদের জন্য আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

অর্কা-হোমসের পরিচালনা কমিটির সদস্য মকবুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, হোমসের পরিচালক নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন জাহান ইয়ারসহ তাদের পরিবারের ৭ জন সদস্য রয়েছেন। রানা প্লাজা ধসের পর বিজিএমইএর হতাহত পরিবারের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বানে সাড়া দেয় অর্কা। এখন হোমসের দ্বিতীয় তলায় ২০ জন মেয়ে শিশুর দায়িত্ব গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা চলছে। সব ব্যবস্থা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।  

এমজেড/এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।