বিশ্বব্যাংকের আরেক প্রকল্পের অর্থ ফেরত দিলেন প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত: ১২:০৩ পিএম, ০৪ এপ্রিল ২০১৭

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দাতাসংস্থা বিশ্বব্যাংকের অর্থ নেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় এ প্রকল্প নিজস্ব অর্থেই বাস্তবায়িত হচ্ছে। এবার রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের আধুনিকায়ন প্রকল্পেও বিশ্বব্যাংকের অর্থ ফেরত দিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার প্রশ্নে বিদেশি বা কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। নিজেরাই করব।’

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। প্রকল্পের ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থাৎ এক হাজার ১৮৫ কোটি টাকা অর্থায়ন করার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। কিন্তু সেই প্রকল্প অনুমোদন দেননি প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত এ অর্থ অন্য কোনো প্রকল্পে ব্যবহার করা যায় কিনা- তা বিবেচনা করার নির্দেশ দেন তিনি।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভার বিভিন্ন দিক নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, “বৈঠকে ‘রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের আধুনিকায়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলেও এটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন না করে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। ফলে প্রকল্পটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রমে বাইরের প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত না করে আমরা নিজেরাই করব। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অর্থায়ন ও কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে অন্য কাউকে অন্তর্ভুক্ত না করে আমরা তা নিজেরাই করক’- যোগ করেন তিনি।

গত বছর সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ১০ লাখ ডলার বেহাত হওয়ার পর রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোগী হয় সরকার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকিংখাত এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তদারকি ব্যবস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা উন্নয়ন করা ‘রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে বিশেষ করে ব্যাংকিংখাত সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিচালিত হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মন্দ ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতাও কমে আসবে বলে মনে করে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়নে ব্যয় ধরা হয় ৩৯৫ কোটি টাকা। বাকি টাকা বিশ্বব্যাংক সহজ শর্ত দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এ অর্থের জন্য ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ‘নেগোসিয়েশন’ও সম্পন্ন হয়।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় দেখা যায়, এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিকায়নের জন্য ‘বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিং’ করা হবে। ব্যাংকসমূহের তথ্যপ্রযুক্তি আধুনিকায়ন করা হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের। এরপর রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকের লেনদেন অটোমেশনের আওতায় আসবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়।

প্রকল্পটি সম্পর্কে মতামত দিতে গিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নতুন হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সংযোজনের মাধ্যমে সরকারি ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া, নিয়ন্ত্রণ, নিরীক্ষা এবং সাইবার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করে সরকারি সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি নিশ্চিত করে আর্থিকখাতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা দরকার বলে মনে করে সরকার। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব প্রকল্পে কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের যুক্ত না থাকাই ভালো। কেননা এর আগে রিজার্ভ চুরির ঘটনার সময়ও সাইবার নিরাপত্তার সঙ্গে বিদেশি প্রতিষ্ঠান যুক্ত ছিল। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত।

এমএ/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।