‘ইসি স্যার, আই এম ইন প্রেসার, হেল্প মি প্লিজ’


প্রকাশিত: ১১:০১ এএম, ৩০ মার্চ ২০১৭

‘ইসি স্যার!আই এম ইন প্রেসার, হেল্প মি প্লিজ’- লিখে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) খুদে বার্তা (এসএমএস)। পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনেই ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে বহিরাগতদের সিল মারা সামলাতে না পেরে ইসির সংশ্লিষ্ট নম্বরে খুদে বার্তা পাঠান এক প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। এরপর বারবার ফোন, কিন্তু দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কারও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে সদর উত্তরের গোবিন্দপুর প্রাথমিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।

জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সামনেই সিল মারতে থাকেন বহিরাগতরা। কিন্তু এ ঘটনার ছবি তুলতে গেলে তেড়ে এসে বাধা দেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু পর ওই কেন্দ্রের সবগুলো বুথে জোর করে ব্যালট বই নিয়ে সিল মারতে থাকেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এ সময় দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার পুলিশ, বিজিবি ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েও এ ঘটনায় কোনো সহায়তা পাননি। বেলা ২টার পর র‌্যাব ঘটনাস্থলে এসে একজনকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়। তবে র‌্যাব আসার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো কেন্দ্র ফাঁকা হয়ে যায়। সটকে পড়ে জাল ভোটাররাও।

2016October

এ ঘটনার পর অনেকেই ভোট দিতে যান কেন্দ্রে, কিন্তু ভোটারের চেয়ে বেশি ভোট পড়বে- এমন আশঙ্কায় ব্যালট পেপার দেয়া বন্ধ রাখেন কর্মকর্তারা।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার দিদারুল ইসলাম ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার কাজী সেলিম জাহাঙ্গীর জাগো নিউজের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

দিদারুল ইসলাম বলেন, ভোট কেন্দ্র দখল হওয়ার পর আমি ইসিতে মেসেজ দেই। ‘ইসি স্যার, আই এম ইন প্রেসার, হেল্প মি প্লিজ’। এরপর বারবার ফোন করলেও কোনো সহায়তা পাইনি। পরে বেলা ২টার দিকে র‌্যাব আসে।’

‘বেলা দেড়টার মধ্যেই ৭০ শতাংশ ভোট হয়ে গেছে। এখন বই দিলে ওভার কাস্টিং হবে তাই ব্যালট দেয়া বন্ধ রেখেছি’ বলেন তিনি।

জাল ভোটের বিষয়ে জানতে চাইলে দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনা সত্য। আমার ৫টি বুথের মধ্যে সবগুলোতেই জোর করে জাল ভোট দেয়া হয়েছে। ১২টা ৩৫ মিনিটে প্রথমে দ্বিতীয় তলায় বুথে প্রবেশ করে জোর করে বই নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে আমার অফিসারের ধস্তাধস্তি হয়। গড়ে ৭০-৮০টি করে জাল ভোট দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলেই দাঁড়িয়ে ছিল। ২ হাজার ২০টা ভোটের ৭০ শতাংশই দেড়টার মধ্যে শেষ।

সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার কাজী সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, ভোটার সেজে প্রবেশ করে আমার কাছ থেকে বই নিয়ে সিল মারতে থাকে কয়েকজন যুবক। আমার সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। আমার ৪ নম্বর বুথে ৮০টির মতো ভোট দেয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ভোটার না এমন ব্যক্তিরাও এর মধ্যে ছিল।

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের টিকিটে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন আঞ্জুম সুলতানা সীমা। আর সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে ধানের শীষের প্রার্থী করেছে বিএনপি।

এছাড়া জেএসডির শিরিন আক্তার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মামুনূর রশীদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নির্বাচনে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে দুই শতাধিক প্রার্থী।

এইচএস/এমএমএ/এএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।