হাজারীবাগের দুর্গন্ধমাখা শৈশব
রাজধানীর হাজারিবাগ থেকে সবগুলো ট্যানারি সাভারে সরিয়ে নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি আজও। কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে ট্যানারিগুলো এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে হাজারীবাগে।
এরমধ্যে অবশ্য কিছু কিছু ট্যানারি সরেছে সাভারে। এসব ট্যানারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করছে বহু শিশু। ট্যানারির বিষাক্ত পরিবেশ তাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
যেসব শিশুরা ট্যানারিতে কাজ করছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই কম বয়সী শিশু। তারা খালি পায়ে, জামা-কাপড় ছাড়াই কারখানায় কাজ করছে। এই দুর্গন্ধ আর বর্জ্য পদার্থের মধ্যেই আটকে আছে শিশুগুলোর শৈশব।
যে সময়টাই হাসি-আনন্দে কাটানোর কথা সেই সময়ে তারা ট্যানারির দুর্গন্ধে মুখ লুকিয়ে দিনের পর দিন কাজ করে যাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রানেরও যেন কোনো পথ খোলা নেই।
ট্যানারিতে মানবেতর জীবন যাপন করছে এসব শিশু। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং বিষাক্ত রাসায়নিক এবং চামড়া কারখানার বর্জ্যের উৎকট দুর্গন্ধ তাদের নিত্য সঙ্গী হয়ে গেছে। বাতাসের সঙ্গে গন্ধ ছড়িয়ে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে সেখানকার পরিবেশ। এতে ট্যানারি শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয়েরও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, হাজারীবাগ এলাকার মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। স্বাস্থ্যঝুঁকির এই হার দিন দিন বেড়েই চলছে।
হাজারীবাগ শিল্প এলাকা থেকে দৈনিক ১৫ হাজার ৮শ ঘনলিটার বিষাক্ত রাসায়নিক তরল বর্জ্য এলাকার উন্মুক্ত ড্রেন হয়ে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ে। আর শুধু ট্যানারি থেকে প্রতিদিন নির্গত হয় ১৯ টন অদ্রবণীয় কঠিন বর্জ্য। যার মধ্যে রয়েছে পচনশীল লেদার কাটিং, ক্লোশিং লোম, রক্ত, সোডিয়াম সালফেট, ক্রোমিয়াম অক্সাইড, তেল, গ্রিজ জাতীয় পদার্থ ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত পানিসহ শতাধিক রকমের কেমিক্যাল।
এসব বিষাক্ত পদার্থ শিশুদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ দিনের পর দিন এই বিষাক্ত পদার্থগুলোই শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করছে শিশুরা।
টিটিএন/পিআর