ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত হত্যা বন্ধে যৌথ পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত কিশোরী ফেলানী খাতুনের হত্যার দ্রুত সুবিচার নিশ্চিত করা হবে। গতকাল ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিজিবিকে এ আশ্বাস দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
এতে বলা হয়, বিএসএফ প্রধান ডি. কে. পাঠক জানিয়েছেন, ওই মামলায় ভারতের দিকের সাক্ষীদের আবার নতুন করে জেরা শুরু হয়েছে। এখন বাংলাদেশের দিকের সাক্ষীদেরও আবার শুনানিতে ডাকার প্রস্তুতি চলছে। ফেলানী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত বিএসএফ জওয়ানকে বেকসুর খালাস দিয়ে বাহিনীর অভ্যন্তরীণ আদালত যে রায় দিয়েছিল, বিএসএফের তদানীন্তন প্রধান সেই রায়ের সঙ্গে একমত হতে না পেরে পুনর্বিচারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তার পর প্রায় বছর ঘুরতে চললেও সেই পুনর্বিচারে বিশেষ অগ্রগতি হয়নি। কিন্তু এখন দিল্লিতে বিএসএফ-বিজিবি মহাপরিচালক পর্যায়ে পাঁচ দিনব্যাপী বৈঠকে প্রসঙ্গটি ওঠার পর ভারত জানিয়েছে, এই মামলায় বাংলাদেশের দিকের যারা সাক্ষী, যাদের মধ্যে ফেলানীর পিতা ও অন্য আত্মীয়রাও আছেন, শিগগিরই নতুন করে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। সেটা কবে ও কোথায়, তা বিজিবিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানানো হবে বলেও কথা দেয়া হয়েছে।
বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, তারা এই আশ্বাসে আপাতত সন্তুষ্ট হলেও শেষ পর্যন্ত কী সুবিচার পাওয়া যায় তা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনতে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী একযোগে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে রাজি হয়েছে।
দিল্লিতে বৈঠক শেষে গতকাল জানানো হয়েছে, সীমান্তে যে সব এলাকায় গরু পাচারের ঘটনা বেশি ঘটে সেখানে পাহারা বাড়ানো হবে। এছাড়া, অনেক জায়গায় রাতে চালানো হবে যৌথ ও সমন্বিত টহলদারী। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যার ঘটনা যে একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনা দরকার, দিল্লিতে বিএসএফ ও বিজিবি’র মহাপরিচালকদের দীর্ঘ বৈঠক শেষে সে কথা স্বীকার করা হয়েছে যৌথ বিবৃতিতেই। বিজিবি’র পক্ষ থেকে এই দাবি তোলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই, তাতে এবার সায় দিয়েছে বিএসএফও। কিন্তু সেই সঙ্গে বিএসএফ প্রধান জানাতে ভোলেন নি নিতান্ত বাধ্য না হলে তারা গুলি ছোড়েন না। বিএসএফের মহাপরিচালক ডি. কে. পাঠক বলেন, কোন পটভূমিতে আর কেন গুলি চালানো হচ্ছে সেটা কিন্তু দেখতে হবে।
সীমান্তে অপরাধমূলক কাজকর্ম বা এক দেশের নাগরিকের অন্যায়ভাবে অন্য দেশে যাওয়া ঠেকানোই সীমান্তরক্ষীদের ম্যান্ডেট। সেই কাজেও আমরা প্রথমেই কিন্তু গুলি চালাই না। অন্য কিছুতে কাজ না হলে বা বাহিনীর সদস্যদের জীবন বিপন্ন হলে কখনও কখনও আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে হয়। বিএসএফের মতে সীমান্তে বেশির ভাগ হত্যার পেছনেই থাকে গরু চোরাকারবার। আর সে কারণেই যে সব এলাকায় এই সমস্যা বেশি, সেখানে বাড়তি পাহারা চালু করতে তারা বিজিবিকেও রাজি করিয়েছেন। স্থির হয়েছে, দু’পক্ষের ব্যাটালিয়ন কমান্ড্যান্টরা কথা বলে যৌথ টহলদারীও চালাবেন, বিশেষ করে রাতে। কিন্তু সীমান্তে অপরাধ ঠেকানোয় সহযোগিতার অঙ্গীকার করলেও অনুপ্রবেশের সমস্যা আছে বলে মানতে চান নি বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। তার যুক্তি হলো, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বাস্তবতাটা বেশ জটিল, এখানে মানুষের আত্মীয়স্বজন ছড়িয়ে আছেন সীমান্তের দু’দিকেই। ফলে প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করতে বা ডাক্তার দেখাতে অবৈধ সীমান্ত পারাপারের মতো ঘটনা ঘটে ঠিকই, কিন্তু কোন অনুপ্রবেশ হচ্ছে বলে আমাদের জানা নেই। আর অনুপ্রবেশ হবেই বা কেন, বাংলাদেশ থেকে মানুষের ভারতে যাওয়ার তো কোন কারণ নেই। অর্থাৎ এই প্রশ্নে বাংলাদেশ তাদের পুরনো বক্তব্যেই অনড় থেকেছে।
ভারতে নতুন সরকারের অনুপ্রবেশ-বিরোধী অবস্থান তাদের টলাতে পারেনি। তেমনি ভারতও মনে করছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারতীয় জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বিএসএফ প্রধান বলেন, বাংলাদেশের ভেতর অন্তত ৭১টি সন্দেহভাজন জঙ্গি শিবির বা ডেরার তালিকা আমরা তাদের হাতে তুলে দিয়েছি। তারা কথা দিয়েছেন তাদের ভূখণ্ড কোন জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। অতীতেও আমরা যখনই তাদের জঙ্গিদের হদিস দিয়েছি তারা সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছেন। এক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আমরা আশা করব।
পাঁচদিনের এই সমন্বয় সম্মেলনে পারস্পরিক সহযোগিতার ব্লুপ্রিন্ট যেমন আঁকা হয়েছে। তেমনি দু’পক্ষের জন্য অস্বস্তিকর নানা বিষয়ও কিন্তু বাদ যায়নি। তবে সব কিছুর পরও বাংলাদেশ এই বৈঠকের পরিণতিতে খুশি, বিবিসিকে বলছিলেন মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। তার বক্তব্য, সীমান্তে বেশির ভাগ সমস্যাই নিচুতলাতেই নিষ্পত্তি হয়ে যায়। শীর্ষস্তরে, অর্থাৎ মহাপরিচালকদের মধ্যে, আলোচনার মতো বিষয় খুব কমই থাকে। সূত্র : মানবজমিন