ত্রিশালে ছিনতাই হওয়া জঙ্গিরা ভারতে!


প্রকাশিত: ১১:৩১ এএম, ২০ এপ্রিল ২০১৫

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় ছিনতাই হওয়া জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) দুই সদস্য ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এমন তথ্য মিলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ইন্টেলিজেন্স বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো থেকে। অবশ্য মামলার অগ্রগতি-ব্যাখ্যায় এক বছর ধরে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত সংস্থাগুলো বলছে, ‘আলামত সংগ্রহ শেষ, যাচাই-বাছাই চলছে’। আর এতো বড় একটি ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা ছাড়া সম্ভব নয় বলে মনে করে একটি বাহিনী।

২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজনভ্যানে বোমা মেরে জেএমবির তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় ‘দুর্বৃত্তরা’। ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গি সদস্যরা হলেন সালাউদ্দিন (সালেহীন), রাকিব হাসান (হাফেজ মাহমুদ) ও জাহিদুল ইসলাম (বোমারু মিজান)। ঘটনার চার ঘণ্টা পর রাকিবকে আটকের পর বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন।

এ ঘটনায় ভালুকা মডেল থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাগুলো হস্তান্তর করা হয় অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ইন্টেলিজেন্স বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আসামিদের ভারতে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর আমরা জানতে পেরেছি, তারা ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে তখন ভারত বিষয়টি আমলে নেয়নি। কিন্তু বর্ধমান বোমা বিস্ফোরণ ঘটনার পর, ভারত আমাদের জানিয়েছে, ছিনতাই হওয়া জঙ্গিরা ভারতে থাকতে পারেন।

বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকে সোমবার বিকেল ৫টায় ফোন করলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান।

সূত্র জানায়, ভারতের গোয়ন্দা সংস্থার তালিকায় বর্ধমান বিস্ফোরণে সন্দেহভাজনদের তালিকায়ও ওই দুই জঙ্গির নাম রয়েছে। শুধু তাই নয়, আশ্রয় নেওয়া জঙ্গিরাসহ আরও কয়েকজন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি মাদ্রাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

অবশ্য জানতে চাইলে সিআইডির অর্গানাইজ ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তা মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ‘যে যাই বলুক, জঙ্গিদের অবস্থান সম্পর্কে কোনো সংস্থাই এখনো নিশ্চিত নয়। তবে তাদের অবস্থানের ‘সম্ভাবনার’ কথাটি ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে।’

এদিকে, ছিনতাইয়ের ঘটনার দিন দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যকে আনুষ্ঠানিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল পদের এক সদস্য বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছাড়া এতো বড় একটি ঘটনা ‘অসম্ভব’। ওইসব সদস্যদের নজরদারি কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে তাদের বদলি করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে।’

এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ‘বদলি কিংবা বরখাস্ত যাই করা হোক না কেন, তদন্তের স্বার্থে যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।’

জঙ্গি ছিনতাই ও দেশের নিরাপত্তা বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এক সদস্য বলেন, ‘সম্প্রতি দেশের গণমাধ্যমগুলো এ ঘটনাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না, ফলোআপ করছে না। মানুষের জানার আগ্রহও কম। তবে ‘বিগ ব্লো ইস ওয়েটিং’, জঙ্গি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা বড় কোনো ঘটনার আভাস দিচ্ছে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থের যোগানদাতার নাম। দাবি গুরুত্বপূর্ণ আলামতপ্রাপ্তির। 

জঙ্গিদের ধরতে অব্যাহত আছে র্যাবের অভিযান। র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘পালিয়ে থাকা জঙ্গিদের ধরতে র‌্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে। তাদের যেকোনো মূল্যে ধরতে র‌্যাব সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’

আসামি ছিনতাইয়ের পর থেকে সড়কে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে পুলিশ। ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম সরওয়ার জানান, ঘটনার পর থেকেই সড়কে টহল বাড়ানো হয়েছে। আসামি বহনের একদিন আগে থেকেই পুলিশ সেখানে অবস্থান নেয়।

এআর/এসএ/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।