জঙ্গি তৎপরতায় দেশজুড়ে পুলিশের সতর্কবার্তা
হঠাৎ করে জঙ্গি অপতৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ লক্ষ্যে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া দেশের বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নেয়া হয়েছে সর্বাধিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়কের চেকপোস্টগুলোতে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হচ্ছে। থানায় অ্যালার্ম প্যারেডের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আরও সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালন করতেও বলা হয়েছে।
সিলেটে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানকালে বাইরে বিস্ফোরণের ঘটনার পরপরই শনিবার রাতে এ সতর্কবার্তা দেয় পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রোববার সকালে সহেলী ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, ‘জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা দেয়া হয়েছে। সবাই যেন সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন, তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিদেশি নাগরিক, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষ স্থাপনার সামনে জোর নজরদারিসহ দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
এদিকে, পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিরা সাধারণ নাগরিকদের টার্গেট না করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে টার্গেট করছে। তাদের বিশেষ ক্ষোভ রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের কাজে বাধা হিসেবে মনে করে তারা।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৭ মার্চ কুমিল্লার চান্দিনা থেকে গ্রেফতার হওয়া আহমেদ আজওয়াদ ইমতিয়াজ তালুকদার ওরফে অমি জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য দিয়েছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভাগীয় এবং জেলা শহরে তাদের একাধিক আস্তানা রয়েছে। একইসঙ্গে তাদের উপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার নির্দেশনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পৃথক দুটি অভিযান চালানো হয়। ১৭ মার্চ রাজধানীর আশকোনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নির্মাণাধীন সদর দফতরের ভেতরে ঢুকে আত্মঘাতী হামলা চালায় এক জঙ্গি।
এছাড়া ২৪ মার্চ ভোরে সিলেটের শিববাড়ি এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালানো হয়। ২৫ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটে অভিযানস্থলের পাশে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ছয়জন নিহত হন।
এরআগে ২৪ মার্চ রাতে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গোলচত্বর এলাকায় বোমা বিস্ফোরণে একজন নিহত হন।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা মনে করছেন শীর্ষ কয়েকজন জঙ্গি পলাতক রয়েছেন, যারা পাল্টা হামলার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিচ্ছেন।
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ১ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) সম্মেলন এবং সামনের পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে জঙ্গিরা তাদের শক্তির জানান দিতে এ অপতৎপরতা শুরু করেছে বলে তাদের ধারণা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় র্যাব সব সময় প্রস্তুত থাকে। পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশজুড়ে র্যাবের ব্যাটালিয়নগুলো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’
এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এরই মধ্যে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইপিও সম্মেলনের জন্য ভেন্যু, দেশি-বিদেশি পার্লামেন্টের সদস্য এবং বিদেশি অতিথিদের থাকার হোটেল ও যাতায়াত রোডে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
অপরদিকে, জঙ্গি তৎপরতার গত কয়েকদিনের ঘটনায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দায় স্বীকারের বিষয়ে রোববার সকালে রাজারবাগে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিলেটে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের মধ্যে বাইরে বিস্ফোরণের সঙ্গে আইএসের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা বলিনি জঙ্গি নির্মূল হয়েছে। আমরা বলেছি জঙ্গিরা আমাদের কন্ট্রোলে রয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সিলেটের শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানার বাইরে জঙ্গিরা বোমা রেখে যেতে পারে। সারাদেশ চষে বেড়িয়েছি। দেশের কোথাও আইএস শনাক্ত করার সৌভাগ্য হয়নি। আমরা যদি আইএস শনাক্ত করতে পারতাম, তাহলে ব্যবস্থা নিতাম।’
জেইউ/জেডএ/এসআর/এমএস