বধ্যভূমিতে নেই কোনো আয়োজন
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় গৃহীত হয়েছে। দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বুদ্ধিজীবীসহ ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়। এ গণহত্যার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের উদ্যোগ নেয়া হলেও রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ ঘিরে নেই কোনো আয়োজন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীনচেতা মানুষদের হত্যার পর রায়েরবাজারে অবস্থিত ইটখোলায় ফেলে দেয়। গণহত্যার ওই নিদর্শন স্বরূপ এখানে ১৯৯৯ সালে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিসৌধ।
সরেজমিন রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ ঘুরে দেখা যায়, গণহত্যা দিবস পালনে এখানে আগাম কোনো প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সোয়া তিন একর বিস্তৃত এলাকা সাফসুতরোর কাজ করা হয়। ধুয়ে-মুছে সবকিছু পরিপাটি করা হয়। কিন্তু ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে কোনো প্রস্তুতিই চোখে পড়েনি। অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থাতেই রয়েছে বধ্যভূমি। জলাধারের পানিও অপরিষ্কার দেখা গেছে।
‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে স্মৃতিসৌধে কোনো অনুষ্ঠান কিংবা প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে তদারক কর্মকর্তা গণপূর্ত অধিদফতরের (ধানমন্ডি) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাশেদুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘গণহত্যা দিবস সম্পর্কে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদফতরের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই কোনো আয়োজন নেই।’
তবে তিনি বলেন, ২৫ মার্চ ভারতীয় হাইকমিশনারের নেতৃত্বে একটি দল বধ্যভূমি পরিদর্শনে আসেন। সেজন্য ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ২৩ মার্চ গণহত্যা দিবসের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানান, এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ, গণহত্যার ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা হবে। এ প্রদর্শনী দু’দিন থাকবে। এ ছাড়া প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় আলোচনা সভা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন শহীদ মিনারের বেদিমূলে পুষ্পস্তবক দেওয়া হবে। তবে এবার শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হবে ২৬ মার্চ ভোরে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস পালনে জাতিসংঘকে প্রস্তাব দেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, যদিও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গণহত্যা দিবস পালনের গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, সর্বোপরি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে জানানোর দায়বদ্ধতা সবার রয়েছে। এ লক্ষ্যে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দিবস ঘোষণার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়, বাঙালির মুক্তির আন্দোলনকে শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে ২৫ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা। পৃথিবীর জঘন্যতম এ হত্যার যাতে কোনো সাক্ষী না থাকে, সে কারণে বিদেশি সাংবাদিকদের হোটেলে বন্দী করে রাখা হয়। ২৬ মার্চ তাদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।
নয় মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বাংলাদেশ নামের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। জাসদের সাংসদ শিরীন আখতার ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে প্রস্তাব তোলেন। সাত ঘণ্টা আলোচনার পর প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।
জেইউ/এমএআর/জেআইএম