২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে


প্রকাশিত: ০৮:৩০ এএম, ২৫ মার্চ ২০১৭

২৫ মার্চ প্রস্তাবিত ‘গণহত্যা দিবস’ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ গণহত্যার ইতিবৃত্ত’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন এখন ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছে। এর পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। শুধু জাতিসংঘের একটা রেজুলেশনকে সম্মান করেই সবাই দিবসটি পালন করছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে ৭১’র গণহত্যার যতো ভিডিও আছে আমরা সব বিদেশি কূটনীতিকদের দেব। আমরা চাই ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে বিশ্ব পালন করুক। আমাদের যেসব যৌক্তিকতা আছে, তা অন্যদেশের নেই। কাজেই আমরা বিশ্বাস করি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী বছর থেকে প্রতিটি ক্লাসে ২৫ মার্চ বিষয়ে লিখে দেব। প্রথম শ্রেণিতে লিখব ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে লিখব ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাকে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। তৃতীয় শ্রেণিতে ৭১ সাল পর্যন্ত যে অত্যাচার করা হয়েছে সেসবের বিবরণ লিখব। চতুর্থ শ্রেণিতে আরও একটু বেশি এবং পঞ্চম শ্রেণিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী বছরের এই দিনে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট থেকে ৩১ মিনিট পর্যন্ত কোনো গাড়ি-ঘোড়া চলবে না। মানুষ জানবে এটা গণহত্যা স্মরণে করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এই দিনে অফিস বন্ধ করে এক ঘণ্টা ২৫ মার্চ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।’

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা এবং তার ডিজাইন সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই হয়েছে। সে অনুযায়ী পরে দেশের জাতীয় পতাকা চূড়ান্ত করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘অপারেশন সার্চলাইটের নামে সেদিন সবখানে একযোগে আক্রমণ চালায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষক, রাজারবাগে পুলিশ লাইন্সসহ বুদ্ধিজীবীদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এই হত্যাকাণ্ডের সিদ্ধান্ত হয় ২২ মার্চ। ইয়াহিয়া খান তার অফিসারদের নিয়ে গোপন বৈঠক করেন। সেদিন তিনি বলেছেন, ৩০ লাখ বাঙালি হত্যা করো। তাহলে তারা আমাদের অনুগত থাকবে। সে অনুযায়ী তারা আমাদের ওপর নির্যাতন চালায়।’

উপাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী এই নদীগুলো পার হয়ে গ্রামগঞ্জ চিনতো না। এদেশের রাজাকার ও পাকিস্তানি দোসররা তাদের বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছে। তারা গ্রামের পর গ্রাম মানুষশূন্য করে দেয়, গণহত্যা শুরু করে। আমরা চাই, এই দিনটিকে গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হোক।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাহজাহান কামাল বলেন, ‘২৫ মার্চ যে গণহত্যা হয়েছে তা বাঙালি জাতির জন্য এক মর্মান্তিক ঘটনা।
অন্তর্জাতিক আহ্বানে তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। সেদিন আমরা তাদের বিচার করতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের সন্তানেরা জেএমবিতে গেছে। স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিছে। আপনারা ফিরে আসুন। আজকের এই দিনটি জাতির জন্য দুঃখের দিন, বেদনার দিন।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহমুদ রেজা খানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন এবিএম তাজুল ইসলাম, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রমুখ।

এমএসএস/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।