ফিক্সিং নিয়ে যতো কেলেঙ্কারি
ক্রিকেটে ম্যাচ ফিক্সিং বা স্পট ফিক্সিং সম্প্রতি বেশ আলোচিত বিষয়। ফিক্সিং নিয়ে বিশ্বের অনেকে ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারও শেষ হয়ে গেছে। এমন নজির বাংলাদেশেও রয়েছে। বলা যায়, ক্রিকেটের প্রধান শত্রু ফিক্সিং। ফিক্সিংয়ের ইতিহাসও একেবারেই নতুন নয়। যুগে যুগে অনেক ম্যাচ ফিক্সিং হয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে আগে দোষীদের শাস্তি দেওয়া কঠিন ছিল। কিন্তু এখন তথ্য প্রযুক্তির কারণে সহজেই ধরা পড়ছেন ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িতরা।
আর এই ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার দায়ে জেল খাটতে হয়েছে পাকিস্তানের তিন ক্রিকেটার সালমান বাট, মোহাম্মদ আসিফ ও মোহাম্মদ আমিরকে। শুধু পাকিস্তানেই নয়, এর সঙ্গে আরও জড়িয়ে আছে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এমনকি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও।
আসুন দেখে নেয়া যাক এই ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত কয়েকটি ঘটনা।
সেলিম মালিক (পাকিস্তান):
ম্যাচ ফিক্সিংয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। সেলিম মালিক ২০০০ সালে কাইয়ুম কমিশনের রায়ে যাবজ্জীবন নিষিদ্ধ হন। আট বছর পর নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পান তিনি। বর্তমানে ক্রিকেট একাডেমির কাজে ব্যস্ত। পাকিস্তানের ব্যাটিং কোচ হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এখন।
ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান):
ওয়াসিম আকরামের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটারের গায়েও ফিক্সিংয়ের কালো দাগ লেগেছিল। সে কারণেই পাকিস্তানের কাইয়ুম কমিশন তাকে ২০০০ সালের পর থেকে পাকিস্তানের অধিনায়ক হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
মুস্তাক আহমেদ (পাকিস্তান):
ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে মুস্তাক আহমেদকে আকরামের মতো লঘু শাস্তি দেওয়া হয়। তিনিও আর পর পাকিস্তানের অধিনায়ক হতে পারেননি। বর্তমানে তিনি আইপিএলের দল দিল্লি ডেয়ার ডেভিলসের বোলিং কোচ।
সালমান বাট (পাকিস্তান):
২০১০ সালে তিন পাকিস্তানি ক্রিকেটার সালমান বাট, মোহাম্মদ আসিফ ও মোহাম্মদ আমির তো মহা কেলেঙ্কারি করে ফেলেন। তারা ফিক্সিংয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেন। যার নাম স্পট ফিক্সিং। এ কারণে সালমান বাট ৩০ মাস জেল খেটেছেন।
মোহাম্মদ আসিফ (পাকিস্তান):
২০১০ সালে স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য মোহাম্মদ আসিফ সাত বছর জেল খেটেছেন।
মোহাম্মদ আমির (পাকিস্তান):
উদীয়মান পেসার মোহাম্মদ আমিরও স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করেন। জেল থেকে মুক্তি পেলেও ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষদ্ধি হয়েছেন।
শ্রীশান্ত (ভারত) :
আইপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিলেন ভারতের জাতীয় দলের পেসার শ্রীশান্তসহ তিন ক্রিকেটারকে। ৯ মে ২০১৩, আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে একটি ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে পরিকল্পিতভাবে ১৪ রান দেন। ১৬ মে ২০১৩ তারিখে বাজিকরদের থেকে টাকা গ্রহণ করার জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। অবশ্য শ্রীশান্ত তার দোষও স্বীকার করে নিয়েছেন। আর এর মধ্য দিয়েই আবার কলঙ্কিত হয় ক্রিকেট। কিন্তু গ্রেফতারের এক মাস পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
মোহাম্মদ আহজার উদ্দীন (ভারত):
ভারতীয়দের মধ্যে ফিক্সিংয়ের কলঙ্ক প্রথম গায়ে মেখে ছিলেন সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহার উদ্দীন। ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। তবে সরকার দলের এই সংসদ সদস্য (মোরাদাবাদ, কংগ্রেস) আদালতের রায়ে ২০১২ সালে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু আইসিসির কোনো অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না আজহার উদ্দীন।
অজয় জাদেজা (ভারত):
ভারতের সাবেক সহ-অধিনায়ক অজয় জাদেজা ফিক্সিংয়ের অভিযোগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। তবে ২০০৩ সালে দিল্লি হাইকোর্ট যথষ্টে প্রমাণের অভাবে অভিযোগ খারিজ করে দেন। বর্তমানে টিভিতে ক্রিকেট বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করছেন জাদেজা।
অজয় শর্মা (ভারত):
ফিক্সিংয়ে অভিযোগে ভারতীয় ক্রিকেটার অজয় শর্মা যাবজ্জীবন নিষিদ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে তিনি কী করছেন তা কেউ বলতে পারে না।
মনোজ প্রভাকর (ভারত):
মনোজ প্রভাকর পাঁচ বছরের জন্য ভারতীয় ক্রিকেটের সব পদেও নিষিদ্ধ ছিলেন। পরে টাকার জোরে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ থেকে মুক্তি পান। দিল্লির কোচের দায়িত্ব পালন করেন।
শেন ওয়ার্ন ও মার্ক ওয়াহ (অস্ট্রেলিয়া) :
ফিক্সিংয়ের খাতায় নাম উঠেছে দুই অসি ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন ও মার্ক ওয়াহরও। তারা ১৯৯৪-৯৫ সালে শ্রীলঙ্কায় চারদেশীয় সিরিজে অর্থের বিনিময়ে পিচ ও আবহাওয়া নিয়ে ভারতীয় বুকিকে তথ্য সরবরাহ করেন। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া দুই ক্রিকেটারকে শুধু জরিমানা করে ছেড়ে দেন।
হ্যান্সি ক্রনিয়ে (দক্ষিণ আফ্রিকা):
দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রোনিয়ে তো ম্যাচ ফিক্সিংয়ে নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়ে মারাই গেছেন। ২০০০ সালে ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ম্যাচে পাতানোর অপরাধে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট তাকে যাবজ্জীবন শাস্তি দিয়েছিল।
হার্শেল গিবস (দক্ষিণ আফ্রিকা):
প্রোটিয়া ক্রিকেটার হার্শেল গিবসও ফিক্সিংয়ের অভিযোগে ৬ মাস ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ ছিলেন।
মারলন স্যামুয়েলস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ):
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারকুটে ব্যাটসম্যান মারলন স্যামুয়েলসও ফিক্সিংয়ে দায়ে দুই বছর ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ ছিলেন।
আশরাফুল (বাংলাদেশ) :
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ২০১৩ মৌসুমে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে সম্পৃক্ততার অভিযোগে নিষিদ্ধ হন। প্রথমে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৮ বছর দেয়া হলেও পরে তা কমিয়ে ৫ বছর করা হয়।
বিএ/পিআর