রাজনৈতিক বাঁকে চাপা পড়ে গেছে রিজার্ভ চুরি ইস্যু


প্রকাশিত: ০৫:০৯ এএম, ২৪ মার্চ ২০১৭

নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির পর বিষয়টি নিয়ে বেশ তোড়জোড় শুরু হয় ফিলিপাইনে। তবে দেশটিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার কারণে বিষয়টি অনেকটা স্থবির আছে; যদিও অর্থ ফেরত আনার জন্য চেষ্টা চালিয়েছে বাংলাদেশ।

ফিলিপিনের ইনকোয়ারার পত্রিকার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ড্যাক্সিম লুকাস বিবিসি বাংলাকে এমনটাই জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির এই ঘটনাটি সারা বিশ্বেই আলোড়ন তোলে, আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাংক তহবিল লোপাটের ঘটনাগুলোর একটি এটি।

চুরি যাওয়া আট কোটি দশ লাখ ডলার চলে গিয়েছিল ফিলিপিনের ব্যাংক ও জুয়ার বাজারে।

রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি প্রথম ফাঁস করেছিলেন ড্যাক্সিম লুকাস। তিনি মনে করেন ফিলিপাইনে এই ইস্যুটি স্থবির হয়ে যাওয়ার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, ফিলিপিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেছে। দ্বিতীয়ত, সে দেশের অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, ব্যাংক তহবিল লোপাটের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ জড়িত।

গেল ডিসেম্বরে রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রিজার্ভের অর্থ চুরির পর গঠিত সরকারি কমিটি ওই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তার অবহেলা ও অসতর্কতার প্রমাণ পেয়েছে। তবে নিম্ন থেকে মাঝারি পর্যায়ের ওই কর্মকর্তারা সরাসরি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে তখন জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

ড্যাক্সিম লুকাস বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ফিলিপিনের আইন-প্রণেতারা গত কয়েক মাসে বিষয়টিকে তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। গত বছরের মাঝামাঝি ফিলিপিনে সাধারণ নির্বাচন হয়েছে। সে দেশে নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাসীন হয়েছেন। দেশটির সংসদের উচ্চ-কক্ষ সিনেটে এখন নতুন নেতৃত্ব। ফলে পরিস্থিতি কিছুটা বদলে গেছে।

লুকাস বলেন, ‘গত বছর শুনানি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে যেসব সিনেটর ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের অনেকেই সর্বশেষ নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেননি। বিশেষ করে যে সিনেটর সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন, তিনিও নির্বাচনে জয়লাভে ব্যর্থ হয়েছেন। ফিলিপিনের আইন প্রণেতারা এখন দেশের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশের চুরি যাওয়া টাকার নিয়ে শুনানির বিষয়টি এখন চাপা পড়ে আছে।’

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফিলিপিন কর্তৃপক্ষ সে দেশে মামলা দায়ের করেছে। এদের মধ্যে আরসিবিসি ব্যাংকের সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন। এখন এ মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। ফিলিপিনে যাওয়া টাকার মধ্যে কিছু টাকা বাংলাদেশ ফেরতও পেয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ টাকা এখনো পায়নি।

এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) দাবি করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে উত্তর কোরিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারার ওই টাকা হাতিয়ে নেয়। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল প্রসিকিউটররা।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে বাংলাদেশেও। গত বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা অজ্ঞাতানামাদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ৪-সহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬ এর ৫৪ ধারায় ও ৩৭৯ ধায়ায় বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

তবে ওই মামলার প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ১২ বার। সর্বশেষ আগামী ১৮ এপ্রিল এ মামলায় প্রতিবেদন দাখিলেন তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।