লিবিয়া থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতিত এক শ্রমিকের গল্প


প্রকাশিত: ০৩:০০ এএম, ১৩ মার্চ ২০১৭
নির্যাতিত শ্রমিক আনোয়ার

বাংলাদেশি মানবপাচারকারী দাউদের বন্দিশালা থেকে ভেন্টিলেটর ভেঙে পালিয়ে এসেছেন বরগুনার আনোয়ার হোসেন। আদম ব্যাপারিদের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ায় গিয়ে ছয়মাস লোমহর্ষক মানবেতর জীবন কাটিয়েছিলেন তিনি। আনোয়ারকে সর্বস্বান্ত করেই ক্ষান্ত হননি  মানবপাচারকারীরা। লিবিয়ায় আটক করে বাড়তি টাকা আদায়ের জন্য লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তার পাঁজরের হাড় ভেঙে দেয়া হয়।

দিনের পর দিন না খাইয়ে রেখে কঙ্কালসার করার পাশাপাশি চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে ফেলে রাখা হয়। সম্প্রতি জীবন নিয়ে কোনোরকম দেশে আসলেও অভিযুক্ত রুমী ও দাউদ ইব্রাহীম চক্রের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। অভিযোগ দায়েরের পর গ্রেফতারও হয়েছিলেন রুমী ও দাউদ ইব্রাহীম চক্রের ৫ সদস্য। তবে কিছুদিন আগে জামিনে ছাড়া পেয়ে আনোয়ারকে দেখে নেবার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন রুমী। এরপর থেকে বাঁচার জন্য র‌্যাবের হেফাজতে দিনাতিপাত করছেন আনোয়ার।

স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি। শনিবার র‌্যাব ও বায়রার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘নিরাপদ অভিবাসন এবং মানবপাচার প্রতিরোধ’ শীর্ষক সেমিনারে এসে জাগো নিউজের কাছে বর্ণনা দেন দীর্ঘ ছয়টি মাস লিবিয়ার শহরে শহরে তার ওপর কীভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে।
     
আনোয়ার জানান, বরগুনা সদরে তার বাড়ি। বাবা (মৃত) চাঁন খান। গত বছরের ১৭ জুন ঢাকার ফকিরেরপুল এলাকায় রিয়াদুল ইসলাম রুমীর একটি সাইনবোর্ডবিহীন অফিসের মাধ্যমে আড়াইলাখ টাকার বিনিময়ে লিবিয়ায় গমন করেন তিনি। লিবিয়ায় নিয়ে প্রথমে ত্রিপলির একটি বসতবাড়িতে আটকে রাখা হয় তাকে। সেখানে গিয়ে দেখতে পান বাংলাদেশ থেকে যাওয়া রিয়াদুল ইসলাম রুমীর লোক দালাল দাউদ ইব্রাহীমকে।

দাউদ ইব্রাহীম গিয়েই আনোয়ারের কাছ থেকে আট লাখ টাকা দাবি করেন। এর মধ্যে কয়েক দফা স্থান পরিবর্তন করে রাখা হয়। তবে কোথায় কোথায় নিয়ে রাখা হয় তা চিনতে পারেননি তিনি। বিভিন্ন স্থানে তাকে আটক করে রাখা হয়েছিল প্রায় পাঁচ মাস। বাড়ি থেকে টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করলেই চলতো রডের প্রহার।

জীবন বাঁচাতে এবং মুক্তির জন্য ছোটভাই দেশে জমি বিক্রি করে রুমীর কথামতো তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট আট লাখ টাকা জমা দেন। এতো টাকা জমা দেয়ার পরও তাকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি না দেয়ায় ঘরের ভেন্টিলেটর ভেঙে ত্রিপলির সারে জাওয়াইয়া নামক এলাকা থেকে পালান তিনি। এরপর এক বাঙালির আশ্রয়ে দুইদিন ত্রিপলিতে অবস্থান করেন। ওই দেশি ভাইয়ের সহায়তায় দেশ থেকে টাকা নিয়ে টিকিট কেটে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসেন তিনি।

আনোয়ার জানান, দেশে ফেরার আগেই তার ছোটভাই বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় রিয়াদুল ইসলাম রুমীকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের করেন। এরপর এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি রুমীসহ রেজাউল ও হালিমকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সম্প্রতি তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্যে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। প্রাণভয়ে কয়েকদিন ধরে র্যা বের হেফাজতে আশ্রয় নিয়েছেন আনোয়ার।

আরএম/জেডএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।