মানবপাচার বন্ধে কাজ করছে সরকার


প্রকাশিত: ০৪:০২ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৭

বিদেশগামীদের সুবিধার্থে অভিবাসন ব্যয় কমানোর পাশাপাশি মানবপাচার বন্ধে কাজ করছে সরকার। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতগুলোকেও সুসংগঠিতভাবে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে যাবেন, তাদেরও সৎ ও দক্ষ হতে হবে ।

শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানোর নামে দালালদের প্রতারণার কথা তুলে ধরেন ফরিদপুরের মহিব উল্লাহ।

এরপর সিরিয়া-ফেরত পটুয়াখালীর একটি মেয়ে তার দুর্ভোগের কথা জানান। তিনি বলেন, পরিবারের দারিদ্র দূর করতে বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে দালালরা তাকে নিয়ে যায় সিরিয়ায়। সেখানে তাকে শারীরিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাকে তিন মাস আটকে রাখা হয় এবং পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়। শরীরে বৈদ্যুতিক শক দিয়েও নির্যাতন করা হতো। একদিন বাড়িতে ফোন করে মাকে সব বলি। এরপর র‌্যাবের সহায়তায় দেশে ফিরে আসি।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মানব পাচারকারীদের দেশের শত্রু উল্লেখ করে তাদের প্রতিরোধে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একজন নারী বিদেশে গিয়ে নির্যাতিত হবেন, এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। এই ধরনের খবর আমাদের কষ্ট দেয়। এসব বন্ধে আমাদের কাজ করতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমি মালদ্বীপে গিয়ে দেখি অনেক লোক রাস্তায় শুয়ে আছে। কাজ নেই। দূতাবাস থেকে বলা হয়, এরা বৈধভাবে আসেনি। আরেক দেশে গিয়ে শুনি সেখানকার জেলে ৮০০ বাংলাদেশি। সাগরপথে হাজার হাজার মানুষ গেছে। থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ার জঙ্গলে অনেকের গণকবর মিলেছে। আমরা চাই না এগুলো থাকুক।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই ধরনের যেকোনো কিছু ঘটলেই মানুষ জিজ্ঞেস করে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী করে? সে কারণেই আমাদের কাজ করতে হয়। র‌্যাব এ কারণেই মানবপাচার প্রতিরোধে কাজ করছে। সবাই মিলে সুসংগঠিতভাবে কাজ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে যাবেন, তাদের দক্ষ হয়ে যেতে হবে। সরকার এজন্য নতুন করে আরও ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করছে। আর প্রবাসীদের কল্যাণেও সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব শামছুন নাহার বলেন, অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়া উচিত না। মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর জন্য নারী পাওয়া যাচ্ছে না। আর অনেকেই অবৈধভাবে চলে যাচ্ছেন। সচিব এই খাতের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের কারণেই মালয়েশিয়ায় সরকারিভাবে লোক যেতে পারেনি। আপনারাই এখন পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা করছেন।’

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সেলিম রেজা বলেন, গত বছর ৭ লাখ ৫৭ হাজার লোক চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন। আমরা মনে করছি এই বছর এই সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়াবে। তবে অবৈধভাবে যারা লোক পাঠায়, সেই মানবপাচারকারীরা দেশ ও জাতির শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, মানবপাচারের মতো মর্মান্তিক ঘটনা থেকে আমরা বের হতে চাই। র‌্যাব এজন্য কাজ করছে। তবে গ্রামগঞ্জের মানুষকেও সচেতন হতে হবে। সাত-আট লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে না গিয়ে দেশেই এখন অনেক কাজ করা যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বায়রার সভাপতি বেনজির আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। র‌্যাব-৩-এর কমান্ডিং কর্মকর্তা তুহিন মো. মাছুম মানবপাচার প্রতিরোধে র‌্যাবের বিভিন্ন কার্যক্রম ও সুপারিশ তুলে ধরেন। বায়রার সাবেক সভাপতি নুর আলী ও বর্তমান মহাসচিব রুহুল আমিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তারা অযথা ব্যবসায়ীদের যেন হয়রানি না করা হয়, সে জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান।

আরএম/এমআরএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।