‘নিজেদের অপাংতেয় ভাবা যাবে না’


প্রকাশিত: ০৩:০৮ পিএম, ০৪ মার্চ ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী সমাজের উদ্দেশে বলেছেন, ‘নিজেদের অপাংতেয় বা অপ্রয়োজনীয় ভাবা যাবে না। প্রত্যেক মানুষেরই কর্মদক্ষতা আছে, কর্মক্ষমতা আছে। নিজস্ব একটি শক্তি আছে। যার যেটুকু আছে সেটা দেশের কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক কর্মী তাদের একটাই লক্ষ্য থাকতে হবে- রাজনীতির মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে কি দিতে পারলাম। মানুষকে কি দিতে পারলাম, সেটাই হবে বড় কথা।’ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো জনগণের মধ্যে তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী এ সময় নারীদের প্রতিও আহবান জানান।

রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শনিবার বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতু ও পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এরপর সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শিরিন রোকসানা। শোক প্রস্তাবে একাত্তরের সকল শহীদ এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মহুতি দেওয়া সকল শহীদের স্মৃতির  প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আশরাফুন নেছা মোশাররফ। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ও মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাফিয়া খাতুন স্বাগত বক্তৃতা করেন। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা এমপি। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খান এমপি। 
 
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর আপনারা দেখেছেন তাদের অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা কোথায় চলে গিয়েছিল। সারাদেশে ৩ হাজার ৩৩৬ জন অগ্নিদগ্ধ এবং সাড়ে ৩শ’ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। স্কুলছাত্র অনিক আর হৃদয়কে আমি চিকিৎসা করাচ্ছি। যতই চিকিৎসা করাই তাদের দেখলে কষ্ট লাগে। বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে সৃষ্ট ক্ষত সারাতে তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। ৬ বছরের শিশু রূপা, অন্তঃসত্ত্বা নারী মনোয়ারা বেগম, স্কুলশিক্ষিকা শামসুন্নাহার ঝর্ণা বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস থেকে রেহাই পায়নি।’  

প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘ভোলার লালমোহন ও এর আশপাশের গ্রামে ১০ বছরের শিশু থেকে ৬৫ বছরের বৃদ্ধ কেউই বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি। পাক হানাদার বাহিনীর মত তারাও বর্বর সন্ত্রাস-নির্যাতন চালিয়েছিল।’

নির্যাতনের ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বরিশালের গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় মা-মেয়েকে একসঙ্গে ধর্ষণ করা হয়। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারী সাবিত্রি দাসের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়। লজ্জায় তারা অনেকেই কাউকে কিছু বলতে পারেননি। তারা অনেকেই আমার কাছে এসে তাদের সেই কষ্টের কথা জানিয়ে গেছেন।’ তিনি বলেন, রাজশাহীর সাত বছরের শিশু রজুফা ধর্ষিত হয়। নেত্রকোণাতেও মহিলাদের ওপর নির্যাতন হয়, রাজশাহীতে মহিমা আত্মহত্যা করে। খুলনায় রুমাকে তুলে আনতে গেলে সে আত্মহত্যা করে ইজ্জত রক্ষা করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রংপুরের নিসবেতগঞ্জে যারা তীর-ধনুক নিয়ে এক সময় পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল তারাও ভয়াবহ সন্ত্রাস, নির্যাতন ও পাশবিকতার শিকার হয়। রাতারাতি পুকুর কেটে বসতবাড়ি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। পুকুরের পাশে চুলা দেখে সেটি যে বসতবাড়ি ছিল তা চিহ্নিত করা হয়।’

তিনি আও বলেন, ‘মাদারীপুরে দুই বছরের শিশু রোকসানাকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে চুলায় নিক্ষেপ করে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালেও একই কায়দায় জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে নির্যাতন করে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা। একদিকে জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করে, অন্যদিকে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে। সেই দৃশ্য এখনও চোখে ভাসে। সেই যন্ত্রণা নিয়ে এখনও অনেকে বেঁচে আছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার মায়েরা বিরাট ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়া, সন্তান ও স্বামীকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠানো, যুদ্ধের খবর সংগ্রহ, সশস্ত্র যুদ্ধ; কি করেননি তারা। পিরোজপুর-বরিশালের বিভিন্ন আনাচে-কানাচে হানাদার ক্যাম্পের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের ইতিহাস আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।’

যুদ্ধে সম্ভ্রমহারা নারীদের পুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তাদের জন্য পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন। সুইজারল্যান্ড থেকে বঙ্গবন্ধু নার্স, ডাক্তার নিয়ে এসে তাদের চিকিৎসা করান। যাদের অ্যাবরশন করানো যায় তাদের তা করান এবং যাদের করানো সম্ভব হয়নি তাদের সন্তান জন্ম দিয়ে বিশ্বের বহুদেশে পাঠিয়ে পুনর্বাসন করেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু তাদের ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধি দেন। আর তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এসব নারীকে স্বীকৃতি দেন। তাদের অনেকেরই বিয়ের সময় বাবার নাম নিয়ে সমস্যা হয়। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘লিখে দাও পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, বাড়ি ধানমন্ডি ৩২’।”

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে হলে সকলের জন্যই সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের একমাত্র সংগঠন যেখানে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।’ তিনি নারীর ক্ষমতায়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘প্রথম সচিব, মহিলা পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, আর্মি, নেভী ও এয়ার ফোর্সে প্রথম নারী সদস্য তার সরকারই নিয়োগ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, মহিলা বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, হাইকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবেও নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়।’

এছাড়া স্থানীয় সরকারের সকল পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় সংসদে বর্তমানে ২১ জন সরাসরি নির্বাচিত নারী সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন প্রতিনিধি রয়েছেন।’

এফএইচএস/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।