স্বপ্নপূরণের পথই বাঁচিয়ে রাখবে অবিন্তাকে


প্রকাশিত: ০২:২৮ পিএম, ০৪ মার্চ ২০১৭

সদা হাস্যোজ্জ্বল একটি মেয়ে। প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াতো। সবাইকে মাতিয়ে রাখতো। অবিন্তা স্বপ্ন দেখতো সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের ভাগ্যোন্নয়নে কিছু করবে। গড়ে তুলবে বৃদ্ধাশ্রম। অবিন্তা কবির মরেননি। সে বেঁচে আছে সবার মাঝে। শরীরে অবিন্তা না থাকলেও ওর স্বপ্ন বেঁচে আছে। স্বপ্নপূরণের পথেই মহাকাল বেঁচে থাকবে অবিন্তা।

গত বছরের জুলাইয়ে হলি আর্টিসানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত অবিন্তা কবিরের স্মরণে সোমবার দুপুরে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এসব কথা বলেন তার নিকট আত্মীয়স্বজন। এ সময় ‘এন ইনটিমেট পোর্ট্রটে অব অবিন্তা কবির’ শীর্ষক একটি বই ও একটি ওয়েবসাইটও উন্মোচন করা হয়।

অবিন্তার পরিবারের আয়োজনে অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন- অবিন্তার নানা মনজুর মুর্শেদ ও নানী নীলু মোর্শেদ, মা রুবা আহমেদ, মামা তানভীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট ও ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- অবিন্তার বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী, পরিচিতজন, শিক্ষক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ ও অবসরপ্রাপ্ত কূটনৈতিকগণ।

অবিন্তার স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ফাউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠা করে তার পরিবার। দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাদান ও সমাজে শিশুদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত থাকবে ফাউন্ডেশনটি। এছাড়াও, অবিন্তার লক্ষ্য ছিল একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করা।

“In Loving Memory of Abinta Kabir” শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রথমে স্মৃতিচারণায় আসেন মামা তানভীর আহমেদ। তিনি বলেন, মৃত্যুর পর আগের অবিন্তার চেয়ে মৃত্যুর পরের অবিন্তা আরও বেশি মেধাবী ও বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। খুঁজে পাওয়া অবিন্তার ডায়েরিতে তা ফুটে উঠেছে।

অবিন্তা ডায়েরিতে লিখে গিয়েছিল, “আমি মানুষের জন্য চিন্তা করি এবং আমার লক্ষ্য আমি বাংলাদেশে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করব যা আমি ব্লু প্রিন্টে উল্লেখ করেছি। আমি বিশ্বাস করি, আজকের এই আমি, আমার সংস্কৃতি ও জাতীয়তার একটি অংশ। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল একটি দেশ আর এ দেশের জন্য কিছু করা আমার নৈতিক দায়িত্ব, যদিও এনজিও প্রতিষ্ঠা করা অতি সামান্য একটি পদক্ষেপ।”

Photo

অবিন্তার নানা মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, অবিন্তা প্রজাপতির মতো ঘুরে বেড়াতো। ঢাকা ছিল ওর প্রিয় শহর। এই শহরে ধুলো-বালি, যানজট সত্ত্বেও ওর ভালোলাগা ছিল ঈর্ষণীয়। আমাদের প্রিন্সেস অবিন্তার চলে যাওয়াটিা ভীষণ কষ্টের।

অবিন্তার মা স্মৃতিচারণা করতে মঞ্চে আসার পর নীরবতা নেমে আসে পুরো হল রুমে। তার মা বলেন, ‘অবিন্তা কবির ছিল আমার এক মহৎ ও ভালো বন্ধু। মেয়ে হিসেবে তো বটেই, বেশি মিস করছি আমি একজন ভালো বন্ধু হারিয়েছি। বাবা-মায়ের ইচ্ছে তাকে তাদের অপূর্ণ স্বপ্ন তাদের সন্তানরা বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু আমি এমন মা যে, আমার সন্তানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ আমাকে করতে হচ্ছে।’

ইংরেজি ভাষায় স্মৃতিচারণায় অবিন্তার উদ্দেশ্যে নিজের লেখা খোলা চিঠি আবৃতি করেন মা রুবা। “১৯ বছর ৪ মাসে একবারও অবাধ্য হোসনি। যদিও কখনও কখনও আমি কঠোর হয়েছি। তুই বলতি আমার মতো হতে চাস। পাগলি মেয়ে, আমার মতো হওয়া তো সহজ। কঠিন তো তোর মতো হওয়া। আমি এক গর্বিত মা। কথা দিচ্ছি তোর স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করব।”

এরপরই অবিন্তা কবির স্মরণে ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন’ এর উদ্বোধনও করা হয়। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, একজন মেধাবী শিক্ষার্থী, যার মাঝে ছিল অফুরন্ত আশা। বেঁচে থাকলে তিনি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারতেন। তার অকাল মৃত্যুতে আমরা হারিয়েছি এক অমূল্য সম্পদ।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট বলেন, “অবিন্তা ছিলেন একজন প্রতিভাবান তরুণী যে কি-না যুক্তরাষ্ট্রের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটিতে শিক্ষার্থী হিসেবে নিয়োজিত ছিল। নিজের নেয়া লক্ষ্য নিজেই অর্জন করার মতো পারদর্শিতা তার ছিল। পুরো পৃথিবীর সঙ্গে বাংলাদেশকে উন্নত স্থানে পরিণত করার ক্ষেত্রে সে ছিল দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। তার অনুপস্থিতিতেও এ পৃথিবীটিকে সে সর্বোৎকৃষ্ট স্থানে পরিণত করে চলেছে। আসুন আমরা সবাই মিলে পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে তুলি, ঠিক যেমনটি অবিন্তার স্বপ্ন ছিল।”

অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হয় অবিন্তা কবিরের স্মরণে এটি ভিডিও তথ্যচিত্র। এছাড়া, তার হাতের লেখার কিছু নোট ও চিঠি উক্ত অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।

জেইউ/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।