প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে যেসব ইস্যু আলোচনায়


প্রকাশিত: ০১:৫১ পিএম, ০৩ মার্চ ২০১৭

আগামী এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর দুই দেশের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে বোঝাপড়া বাড়াতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ‘অমীমাংসিত’বিষয়ে সমাধানই এ সফরের প্রত্যাশা।

এ প্রত্যাশার মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আসছে অনেক ইস্যু। তিস্তা চুক্তি, জ্বালানি সহযোগিতা, ভিভিআইএনের  চার দেশের মধ্যে ইলেকট্রিক গ্রিড স্থাপন, পদ্মা বা গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ, রফতানি বৃদ্ধির জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা-অসুবিধা, বর্ডার হাট বৃদ্ধি, সীমান্ত সমস্যা, ব্লু ইকোনমি ও সামরিক সহযোগিতার বিষয়ও আলোচনায় আসতে পারে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের মধ্য দিয়ে সম্পর্কের যে নবযাত্রা শুরু হয়েছে, ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের পর যে নতুন উদ্যোম ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে এর ধারাবাহিকতায় এ সফর সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং সেই সঙ্গে আঞ্চলিক ইস্যুতে সামনের দিকে আরও ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে পারবে।’

আওয়ামী লীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু প্রতিবেশী, সে হিসেবে পারস্পরিক মর্যাদার ভিত্তিতে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। বেশকিছু বিষয়ের সমস্যা সমাধান নিয়ে আলোচনা চলছে। তিস্তার পানিবণ্টন, পদ্মা নদীর ওপর ব্যারাজ নির্মাণ এ ধরনের বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা আশা করবো এ বিষয়গুলো সমাধানের পথে এগিয়ে যাবে। পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর গুরুত্ব বহন করছে। আমরা আশা করছি, যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে সেগুলোর সমাধান আসবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তারপর আরেকটি পাল্টা সফর হওয়া খুব জরুরি ছিল। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে বোঝাপড়াটা আরও শক্তিশালী হওয়া জরুরি। সেটা একটা বড় অর্জন হতে পারে। সেই অর্জনের ওপর ভিত্তি করেই অনেক সমস্যার সমাধান করা যাবে।

তিনি বলেন, এ সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয় যেমন পানিবণ্টন ও ব্যবস্থাপনা, গঙ্গা ব্যারাজ অনুমোদন ও তিস্তার পানিচুক্তি স্বাক্ষর গুরুত্বপূর্ণ। তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার বিষয়টি ক্ষীণ। দুই দেশের সামরিক সহযোগিতার কথা শোনা যাচ্ছে। সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে অস্ত্র কেনা থেকে শুরু করে হয়তো অনেক বিষয় আসতে পারে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শংকর দুদিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফর সম্পর্কিত সময়সূচির খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়। আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে অথবা শেষ সপ্তাহের দিকে এ সফর হতে পারে। মার্চের ১৭ থেকে ১৯ তারিখ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

ভারতের অর্থমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, চীনের অর্থায়নের বিষয়টা মাথায় রেখে ভারতের দিক থেকেও বাংলাদেশে বিনিয়োগের একটা প্রস্তাব দিতে পারে। সেটি কতটা বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে আসবে অথবা চীন থেকে আরও উত্তম হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। কানেক্টিভিটিকে জোরদার করতে হলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিকল্প নেই। অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রশ্নে চীনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের কথা ছিল ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর। তবে অনিবার্য কারণে ওই সফর স্থগিত করা হয়। এরপর ১০ ডিসেম্বর শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের এক সৌজন্য বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ভারত সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু সেবারও অনিবার্য কারণে এ সফর স্থগিত করা হয়।

এইউএ/ওআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।