কাদের মোল্লার মঞ্চেই ফাঁসি হবে কামারুজ্জামানের
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যে মঞ্চে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছিল সেই মঞ্চেই অপর জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। এজন্য কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করতে নতুন করে মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে না। কাদের মোল্লাকে যে মঞ্চে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছিল কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে ইতোমধ্যে সে মঞ্চটি প্রস্তুত করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে সামিয়ানা। এছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগারের চারপাশে নষ্ট লাইটগুলো ঠিক করা হয়েছে। কারাগার সংলগ্ন এলাকায় নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সোমবার দুপুর ২টার দিকে সাদা রঙের একটি নম্বরবিহীন অ্যাম্বুলেন্সে লাশবাহী কফিন কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে নেয়া হয়েছে। তখন থেকে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে যায় সোমবারই হয়তো কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। এজন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও কেন্দ্রীয় কারাগারের আশেপাশে দোকানগুলোকে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল।
কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড রায় বহাল রাখার রায় প্রকাশ পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ বিশেষ চিঠি পাঠিয়ে কামারুজ্জামানের পরিবারকে সাক্ষাতের জন্য ডেকে পাঠান। তারা দেখাও করে গেছেন। এখন শুধু আদেশের কপি কারাগার কর্তৃপক্ষের হাতে আসার বাকি।
তবে সর্বশেষ রাত সাড়ে আটটার খবর অনুযায়ী, মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার রায়ের কপি এখনো হাতে পায় নি কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।
সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা রায়ে কপি এখনো হাতে পাইনি। রায়ের কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কিছুই করতে পারবো না।’
রায় কার্যকর সম্পর্কে তিনি বলেন, `মহামান্য আদালতের আদেশের কপি আমরা এখনো হাতে পাইনি। আদালতের আদেশের কপি হাতে পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কামারুজ্জামানের পরিবারের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে কোনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির রায় ঘোষণার পর আইন অনুযায়ী তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি পান। কামারুজ্জামানের বেলাতেও একই ঘটনা ঘটেছে।’
তিনি বলেন, আইনের যত সুযোগ-সুবিধা ও বিধিনিষেধ আছে, কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রেও তা অনুসরণ করা হবে।
কামারুজ্জামান ক্ষমা প্রার্থনা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অবান্তর প্রশ্ন, এখনো আদেশের কপি পাইনি। আদেশের কপি হাতে পেলে তা কামারুজ্জামানকে পড়ে শোনানো হবে।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন কিনা তা তার(কামারুজ্জামানের) কাছে জানতে চাওয়া হবে। যদি তিনি ক্ষমা চান তবে সময় পাবেন নইলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে ১৫ সদস্যের পরিবার ও আত্নীয় স্বজনের প্রতিনিধি কামারুজ্জামানের সাথে সাক্ষাতের পর বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর বাবা কোনো ভুল করেন নি, কোনো অপরাধ করেন নি। শেরপুরের সোহাগপুরের যে ঘটনায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তা ঐতিহাসিকভাবে ভিত্তিহীন। সে কারণে তাঁর বাবা ক্ষমা প্রার্থনা করবেন না বলে জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে বাবা কামারুজ্জামান রাজি নন। তবে আইনজীবীরা পরামর্শক্রমে এক্ষেত্রে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেবেন।
মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহালের যে রায় তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে আর কোনো আইনি বাধা নেই। কারাগার কর্তৃপক্ষও সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এখন বাকি রইলো শুধু আদালতের আদেশের কপি কারাগার কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছানো এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাওয়া বিষয়টি।
জেইউ/এসআরজে