এবার কামারুজ্জামানের সন্তানরা দেখালেন `ভি` চিহ্ন
এবার দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের সন্তানেরা পিতার রিভিউ আবেদন খারিজের পরও বিজয় সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখালেন। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে দুই আঙুল তুলে ‘ভি’ চিহ্ন দেখান তারা। গণমাধ্যমের আলোকচিত্রীদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে সেই ছবি।
সাংবাদিকরা এই চিহ্ন দেখানোর কারণ জানতে চাইলে কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক ভুল রায় হয়ে থাকবে। তার পরিবার এই রায়ে বিচলিত নয়। তারা হাসিমুখে বিদায় জানাতে পেরেছেন বলেই এই চিহ্ন দেখিয়েছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার পরিবারের সদস্যরা যখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হচ্ছিলেন, ততক্ষণে সবার জানা হয়ে গেছে যে মৃত্যুদণ্ড এই দিন কার্যকর হচ্ছে না।
সকালে কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করে দেওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এখন এই আল বদর নেতার দণ্ড কার্যকরে আর বাধা নেই।
এরপর আইনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনের কথায় দণ্ড কার্যকরের আলোচনার মধ্যে দুপুরে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে যেতে তার পরিবারকে চিঠি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
একটি মাইক্রোবাসে করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কামারুজ্জামানের পরিবারের মোট ১৬ জন কারাগারে পৌঁছান। ১৫ মিনিট পর তারা সবাই কারা ফটক দিয়ে ভেতরে যান, পৌনে ৮টার দিকে বেরিয়ে আসেন তারা।
কারাগারের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসার সময়ই কামারুজ্জামানের দুই সন্তানকে দুই আঙুল তুলে ‘ভি’ চিহ্ন দেখাতে দেখা যায়।
যুদ্ধাপরাধের মামলার দ্বিতীয় রায়ে কামারুজ্জামানের মতোই জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হওয়ার পর ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি।
তার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ থেকে সৃষ্ট শাহবাগ আন্দোলন গড়ে ওঠার পর ট্রাইব্যুনালের আপিলের আইন সংশোধন হয়। আপিলের রায়ে মৃত্যুদণ্ড হওয়ার পর ২০১৩ সালে তা কার্যকরও হয়েছে।
রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ায় কামারুজ্জামান এখন শুধু দণ্ড মওকুফ চেয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চেয়ে আবেদন করতে পারেন।
এই বিষয়ে হাসান ইকবাল বলেন, “বাবা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেই রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া-না চাওয়ার বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেবেন।”
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে আলোচনা করতে আইনজীবীরা বিকালে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষ তাদের অনুমতি দেয়নি।
রিভিউ আবেদন খারিজের পর দণ্ড কার্যকরের সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী রাত পৌনে ৮টায় সাংবাদিকদের বলেন, আদালত থেকে কোনো সংক্ষিপ্ত আদেশ তারা পাননি বলে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে কামারুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি তারা।
এর ফলে দণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া আটকে যায়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেন, “আদেশটা না গেলে ক্যামনে ফাঁসি দেয়।”
২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের আগেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। তবে সে সময় কাদের মোল্লা প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
একাত্তরে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুরে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে ময়মনসিংহের আল বদর নেতা কামারুজ্জামানের সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, একাত্তরে কামারুজ্জামান ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসিদের চেয়েও ভয়ঙ্কর।
কামারুজ্জামানের ছেলে ইকবাল তার বাবাকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, “এই রায় ভিত্তিহীন, মিথ্যা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ যারা এই মামলার প্রক্রিয়ায় জড়িত, তাদের বিচার একদিন আল্লাহ করবেন।”
কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়াদের মধ্যে ছিলেন স্ত্রী নুরুন্নাহার; ছেলে হাসান ইকবাল, হাসান ইমাম ও আহমেদ হাসান; মেয়ে আতিয়া নূর; ভাই কামরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আফিয়া নূর; ভাতিজা আরমান, ভাতিজি আরিফা ও মলি; শ্যালক রুম্মান; ভাগ্নি রোকসানা জেবিন, জিতু, মুন ও মনি এবং বিউটি নামে এক আত্মীয়া।
ইকবাল বলেন, তারা কামারুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলতে পারলেও তা শেষ দেখার মতো ছিল না। তার বাবাকে ধরতে পারার মতো কাছাকাছি তাদের আনা হয়নি।
জেইউ/এসআরজে