গীতিকার পরিচয়েই আত্মতৃপ্তি খুঁজে বেড়াই


প্রকাশিত: ০২:০৮ পিএম, ০৬ এপ্রিল ২০১৫

আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে লিখছেন। গীতিকার হিসেবে দেশে প্রচলিত প্রায় সব স্বীকৃতিই তিনি জয় করেছেন। তবে নিজে মনে করেন তার সবচাইতে বড় অর্জন শ্রোতাদের জন্য পাঁচ হাজারের মতো গান লিখতে পারা। সত্যি অসাধারণ এক মাইলফলক! সম্প্রতি ২০১৩ সালের সেরা গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেছেন। এ নিয়ে চারবার হলো। অভাবনীয় এই সাফল্যের অনুভূতি জানতে তার মুখোমুখী হয়েছিলো জাগোনিউজ। আলাপে আলাপে দেশবরেণ্য গীতিকার কবী বকুল জানালেন অনেক কথা-

জাগোনিউজ : চারবারের মতো পুরস্কার পেলেন। কেমন লাগছে?
কবীর বকুল : স্বীকৃতি সবসময় আনন্দের। কার না ভালো লাগে কাজের মূল্যায়ন পেতে। হয়তো প্রথমবারের যে উচ্ছ্বসিত অনুভূতি ছিলো সেটা এখন হয় না। কিন্তু দায়িত্ববোধটা বাড়ে। মনে হয়, যা খুশি তাই গান লিখার সময় আর নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই স্বীকৃতি আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। বয়স কিংবা সময়কে হারিয়ে তরুণের মতোই লিখতে সাহস যোগায়।

জাগোনিউজ : আপনার প্রথম গান লেখার গল্পটা শুনতে চাই...
কবীর বকুল : আমি ১৯৮৮ সালে আইয়ূব বাচ্চুর ‘ময়না’ অ্যালবামের জন্য প্রথম গান লিখেছিলাম। আর চলচ্চিত্রে ১৯৯৪ সালে ‘অগ্নি সন্তান’ ছবি দিয়ে যাত্রা শুরু। শ্রদ্ধেয় সঙ্গীত পরিচালক আবু তাহের ভাইয়ের হাত ধরে আমি এই সুযোগটা পেয়েছিলাম। তারপর থেকে...এই তো....

জাগোনিউজ : কোন গানের জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান?
কবীর বকুল : সামিয়া জামান পরিচালিত ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মেঘের কোলে রোদ’ ছবির জন্য একটি গান লিখেছিলাম। প্রয়াত সুরকার প্রণব ঘোষের সুরে ‘বলো না কেন ওই আকাশ নেমে আসে সাগরের বুকে’ শিরোনামে গানটি দিয়েই আমার প্রথম চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়। এতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন আসিফ আকবর, দিনাত জাহান মুন্নী ও রবি চৌধুরী। আর পর্দায় ঠোঁট মিলিয়েছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা রিয়াজ, টনি ডায়েস ও অভিনেত্রী পপি।

জাগোনিউজ : তারপর.....
কবীর বকুল : তারপর হ্যাট্রিক। হা হা হা। ২০০৯ সালে পি এ কাজল পরিচালিত স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা চলচ্চিত্রের ‘একটা চাঁদ ছাড়া রাত আঁধার কালো’ গানের জন্য, ২০১০ সালে বদিউল আলম খোকনের নিঃশ্বাসে আমার তুমি চলচ্চিত্রের ‘রুপালি চাঁদ নেমেছে’ গানটির জন্য পুরস্কার পাই। আর সর্বশেষ পেলাম  ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’ ছবিতে গান লিখে। পরপর তিনবার মিলে হ্যাট্রিক। খুব মজা পেয়েছিলাম সেবার। কাছের মানুষরাও দারুণভাবে উইশ করেছিলো। আসলে এগুলোই প্রতিদিনের এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা।

জাগোনিউজ : একটা মজার বিষয় আপনাকে নিয়ে বলা হয় মিডিয়াতে। আপনি নাকি কাগজ-কলম ছাড়া গান লিখেন না?
কবীর বকুল : হা হা হা...এটা আসলে কেন করি নিজেও জানি না। তবে কম্পিউটারে সব কাজ করলেও গান লিখি কাগজ-কলমে। ভালো লাগে। আর অন্য কোন বিশেষ কারণ নেই।

জাগোনিউজ : এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলবো। গানের মানুষদের দাবি সঙ্গীতাঙ্গনে খারাপ সময় যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
কবীর বকুল : আমি এর দ্বিমত পোষণ করছি। খারাপ সময়ের কিছু নেই। আমি তো দেখছি এখনও প্রতিমাসে দুই তিনটি করে জনপ্রিয় গান প্রকাশ হচ্ছে। হ্যাঁ, হয়তো গানগুলো বেশিদিন বাজারে টিকছে না। এর কারণ সঙ্গীতের মন্দা বাজার নয়, শ্রোতাদের দ্রুত পরিবর্তনশীলতা। সময় এখন আগের মতো নেই। সবাই এখন আপডেট চায় মুহূর্তে মুহূর্তে।

জাগোনিউজ : গানের বাজারে এখন নতুনদের রাজত্ব। এটি কিভাবে দেখছেন আপনি?
কবীর বকুল : অবশ্যই এটি ইতিবাচক। যে কোন ইন্ড্রািষ্ট্রি নিত্য নতুন ধারণা আর মেধা নিয়ে এগিয়ে চলে। আমাদের এখানেও তাই হচ্ছে। নতুন অনেক গীতিকার খুব ভালো গান লিখেছেন। নতুন শিল্পীরা গাইছেনও দারুণ। বেশ ক’জন তরুণ সঙ্গীত পরিচালককে চিনি আমি। তাদের সুর-সঙ্গীত অসাধারণ। আমিও একদিন নতুন ছিলাম। সুযোগ পেয়েছি বলেই এতদূর এসে আজকের কবীর বকুলে পরিণত হয়েছি। তেমনি সুযোড় পেলে আজকের নবীনরা সব বদলে দিয়ে আবারও গানের ঐতিহ্যটা ফিরিয়ে আনবে। তবে পুরোনোরা অভিজ্ঞতার মূল্যায়ণও করতে হবে।

জাগোনিউজ : আরেকটি প্রসঙ্গে বলুন। আজকাল মিউজিক ভিডিও’র চল শুরু হয়েছে। প্রায়ই দেখা যায় অনেকেই অ্যালবাম প্রকাশ না করেই একটি গান মিউজিক ভিডিওতে প্রকাশ করছেন। হাবীবের মতো জনপ্রিয় শিল্পীও বৈশাখে একটি সিঙ্গেল গান নিয়ে আসছেন অডিও এবং ভিডিওতে। এই যে নতুন একটা ধারা শুরু হলো সেটা কীভাবে মূল্যায়ণ করবেন আপনি?
কবীর বকুল : অনেক ইতিবাচক একটি সিদ্ধান্ত এটি। গান এখন আর শুধু কানেই সীমাবদ্ধ নয়। শ্রোতারা এখন গান শোনার পাশাপাশি দেখতেও চান। আর ব্যক্তিগতভাবে আমিও এটার পক্ষে। কেননা, বলে থাকে মানুষ- ‘আগে দর্শনধারী তারপর গুণ বিচারী।’ তাছাড়া বহির্বিশ্বেও এই ধারা বা ফর্মূলা অনুসরণ করা হয়। আপনাকে তো সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতেই হবে। তবে এসব ভিডিওর ক্ষেত্রে মানের দিকটা নজর দেয়া উচিত।

জাগোনিউজ : শোনা যাচ্ছে আপনি মাছরাঙা টেলিভিশন থেকে অবসর নিয়েছেন?
কবীর বকুল : হ্যাঁ। নিতান্তই ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। অনেকেই বিষয়টাকে নানাভাবে প্রকাশ ও প্রচার করছেন। কিন্তু কেন জানিনা। মিডিয়ার মানুষ হয়ে মিডিয়ার মানুষকে এভাবে আহত করাটা বেতনাদায়ক। মাছরাঙা আমার প্রিয় একটি চ্যানেল। সেখানে যতদিন কাজ করেছি সবাই সাহায্য করেছেন। আমিও তাদের আজীবন শুভাকাঙ্খী। গানের প্রতি মনযোগী হবো বলেই চাকরিটা ছেড়েছি। অন্য কোন কারণ নেই। আমি সাংবাদিকতা করেছি, অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছি, সমন্বয় করেছি। কিন্তু আমি গীতিকার পরিচয়টাই আমাকে সবসময় আন্দোলিত করে। গীতিকার পরিচয়েই আত্মতৃপ্তি খুঁজে বেড়াই।

জাগোনিউজ : আপনার নিজের লেখা পছন্দের কিছু গান...
কবীর বকুল : যায় দিন যায় একাকী, কেউ প্রেম করে কেউ প্রেমে পড়ে, আমার মাঝে নেই এখন আমি, আসবার কালে আসলাম একা, আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে, এত ভালোবেসো না আমায়, লাজুক পাতার মত লজ্জাবতী, তোমারে দেখিলো পরানো ভরিয়া, একটা চাঁদ ছাড়া রাত আঁঁধার কালো।

জাগোনিউজ : ব্যক্তিগত প্রশ্নে যাচ্ছি। আপনার পরিবার সম্পর্কে পাঠকদের কিছু বলুন...
কবীর বকুল : আমার পরিবার নিয়ে আমি খুব সুখী মানুষ। একজন সুখী স্বামী, একজন আনন্দিতা বাবা। আমার স্ত্রী দিনাত জাহান মুন্নী গান করে। নিশ্চয় পাঠকরা তাকে ভালো করেই চেনেন। আমি নিজে গানের গাগল। ওর জন্য সেই পাগলামিটা মধুর হয়েছে। আর দুই মেয়ে প্রেরণা, প্রতীক্ষা ও প্রচ্ছদ নামে আমার এক ছেলে রয়েছে। সবাই দোয়া করবেন তাদের জন্য।

জাগোনিউজ : সবশেষে কবীর বকুলের শেষ কথা কী?
কবীর বকুল : আমি গানের মানুষ। গান ভালোবাসি। গান নিয়ে অমরত্ব চাই।

এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।