বায়ান্নোর স্মৃতি নিয়ে শহীদ মিনারে ৩৫ ভারতীয়


প্রকাশিত: ০৯:৪৩ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

১৯৫২ সালে মাতৃভাষার দাবিতে উত্তাল দেশ। তখন আমার বয়স ছিল ১৪, ক্লাস সেভেনে পড়ি। তবে ভাষার দাবিটা ঠিকই অনুধাবন করতে পারছিলাম। মায়ের ভাষা বাংলার বদলে উর্দুকে মেনে পারিনি। তাই কোটালিপাড়ার স্কুল ত্যাগ করেছিলাম কয়েক জন সিনিয়র ভাইর সঙ্গে।

কথাগুলো বলছিলেন দিপক দাম। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কলকাতা থেকে ঢাকায় এসেছেন এক সময়ের গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার বাসিন্দা এই ভারতীয় বাঙালি।

তিনি বলেন, আন্দোলনের কারণে ভাষার দাবি ফিরে পেলেও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচারে বাধ্য হয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিলেও এদেশের প্রতি ভালবাসা কমেনি একটুও।

শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুধু তিনি নন, `পরিচয় ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস হলিডেস` নামে সংগঠনের ব্যানারে এসেছেন আরও ৩৪ বাঙ্গালী।

এ সময় জাগো নিউজের কাছে স্মৃতিচারণ করেন দিপক দাম, সঙ্কু মুখার্জি অনিমেষ চ্যাটার্জিরা।

bav

দিপক দাম জানান, পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় বাস করতেন তারা। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাংলার বদলে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার পায়তারা শুরু করে। প্রাণের ভাষা বাংলা বাদ দিয়ে হঠাৎ উর্দুকে মেনে নেয়াটা ছিল অযাচিত। সে কারণে শুরু হয় আন্দোলন।

তিনি বলেন, আন্দোলনের মুখে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়। সে সময় বাংলার জন্য স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছিল। কয়েকজন সহপাঠী মিলে সিনিয়র ভাইদের সঙ্গে স্কুল পালিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম। আজ সবই ইতিহাস।

তিনি আরও জানান, ১৯৭১ সালে পরিবারের সঙ্গে ভারতে যান। পরে সেখানে মেট্রো রেলে চাকরি নেন। ৭ বছর আগে অবসর নেয়া এ বাঙ্গালি এখন বাস করেন কলকাতার নিউ ব্যারাকপুরে।

দিপক দাম বলেন, পশ্চিমবঙ্গেও বাংলায় কথা বলি। কিন্তু ভাষার দাবিটা ছিল যে বাংলাদেশে, সেই টান আজও অনুভব করি। উপলক্ষ ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হলেও প্রাণের এদেশে আসতে পেরে অসম্ভব ভাললাগা কাজ করছে।

সঙ্কু মুখার্জি জানান, ৫ দিন আগেই তারা সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন বাংলাদেশে আসার জন্য। বর্ডার পার হয়ে বাসে করে ঢাকায় এসেছেন।

তিনি বলেন, ভাষার দাবিতে জীবন দেয়া জাতি তো আমরা বাঙ্গালিরাই। তাই অবাক বিস্ময়ে পুরো পৃথিবী আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। স্বতন্ত্র দেশে বসবাস হলেও আমাদের সংস্কৃতি, আচার-পোষাক একই। বাংলা ভাষাই যে আমাদের ঐক্যের ভিত্তি।

জেইউ/এমএমজেড/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।