ফুলে কোটি টাকা মুনাফার আশা
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রায় কোটি টাকা মুনাফার আশা করছেন শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার শাহবাগের একাধিক ফুল ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির অধীনে ৫১টি প্রতিষ্ঠান আছে। ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে এসব প্রতিষ্ঠানে সম্মিলিতভাবে প্রায় ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
তারা জানান, এবারের ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শাহবাগে এখনও (সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত) ফুল বিক্রি শুরু হয়নি, প্রস্তুতি চলছে। মূলত বিক্রি শুরু হবে সন্ধ্যার পর। রাত ১২টার মধ্যেই অধিকাংশ ফুল বিক্রি হয়ে যাবে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনের বেলায়ও কিছু ফুল বিক্রি হবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সর্বাধিক বিক্রি হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি ও ফুলের তোড়া। এ লক্ষ্যে শাহবাগে বিভিন্ন সাইজের শ্রদ্ধাঞ্জলি ও ফুলের তোড়ার পাশাপাশি মাথার রিং, রজনীগান্ধার মালা, রক্তজবা এবং চন্দ্রমল্লিকার সমন্বয়ে মালা তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি তৈরিতেই বেশি ব্যস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা।
শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও আনিকা পুষ্প বিতানের প্রোপ্রাইটার মো. আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ৩২ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। বর্তমানে শাহবাগে ৫১টি ফুলের দোকান আছে। আশা করছি এবার ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ব্যবসা ভালোই হবে।’
তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এবার শাহবাগে দেড় থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। গত বছর বিক্রি হয়েছিল দেড় কোটি টাকারও বেশি।
তিনি আরও বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শাহবাগের প্রতিটি দোকানে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়। মুনাফা হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তবে যাদের দোকান বড় এবং ফুল বেশি, তাদের বিক্রি ও লাভও বেশি হয়।
আবুল কালাম বলেন, আমার ধারণা শাহবাগের সব ব্যবসায়ী মিলে এবার ৭০-৮০ লাখ টাকা মুনাফা করবো। গত বছর মুনাফা হয়েছিল ৫০ লাখ টাকার বেশি।
এ সময় আক্ষেপ করে তিনি বলেন, দেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করেছেন। অথচ আমরা ফুল ব্যবসায়ীরা পথেই পড়ে থাকলাম। একের পর এক আশ্বাসই পাই, কিন্তু পুনর্বাসন আর বাস্তবায়ন হয় না। সাঈদ খোকনও মেয়র নির্বাচিত হয়ে আমাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারির ফুল বিক্রি নিয়ে যশোরের ফুল ব্যবসায়ীদের মন্তব্যের বিরোধিতা করেন আবুল কালাম।
তিনি বলেন, যশোরের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মিডিয়ার কাছে বলে এ দিবসগুলোতে তারা ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মূলত বিদেশ থেকে অনুদান পাওয়ার আশায় তারা ফুল বিক্রির পরিমাণ বাড়িয়ে বলেন।
নিউ লাভ লাইন পুষ্পালয়ের মালিকের ভাগ্নে মো. রবেন বলেন, শাহবাগে সর্বাধিক ফুল বিক্রি হয় পহেলা ফাল্গুন। এরপরই ২১ ফেব্রুয়ারি। প্রতিটি দোকানে ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কমপক্ষে ৩০-৪০ হাজার টাকা ব্যবসা হয়। আর বড় দোকানগুলোতে এর পরিমাণ ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার বেশি। সব মিলিয়ে এবার ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শাহবাগের ব্যবসায়ীরা এক থেকে দেড় কোটি টাকা ব্যবসা করবেন।
অহনা ফুল কুটিরের কারিগর আলাউদ্দিন বলেন, মাঝারি সাইজের একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি তৈরি করতে ২৫০-৩০০ টাকা খরচ হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা এ শ্রদ্ধাঞ্জলি বিক্রি করেন ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায়। অন্য সময় এর দাম থাকে ৭০০-৮০০ টাকা। এছাড়া এদিন ছোট আকারের শ্রদ্ধাঞ্জলিও তৈরি করা হয়, যা বিক্রি হয় ৪০০-৫০০ টাকায়।
এদিকে একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২১ ফেব্রুয়ারির কারণে আজ (সোমবার) থেকে শাহবাগে এক পিস গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়।
এছাড়া রজনীগন্ধার স্টিক ৫-৬ টাকা, গাঁদাফুলের মালা ২০-২৫ , অর্কিড ৫০-৭০, লিলি ২৫০-৩০০, জারবেলা ১৫-২০ , কেলোনজরা ৫ , ফুলের তোড়া ১০০-২০০ এবং মাথার রিং ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এমএএস/এমএমজেড/জেআইএম