অটিজম মোকাবেলায় দরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন : সায়মা ওয়াজেদ
বাংলাদেশের অটিজমবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীকন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেছেন, উন্নয়নশীল বিশ্বে অটিজম মোকাবেলায় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার, সীমিতসেবা, সেবাদানকারীদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের অভাব এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতিসংঘ সদর দফতরের ইকোসক চেম্বারে আয়োজিত ‘বিশ্ব অটিজম সম্প্রদায়ের জন্য বিজ্ঞান, সহযোগিতা ও উত্তর’ বিষয়ক আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি। শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ কথা বলা হয়।
‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অটিজমের বহুমাত্রিক কৌশল’ শীর্ষক পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, অটিজম সচেতনতা ও সেবা নিয়ে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে।
তিনি বলেন, অটিজমবিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি, জাতীয় পরামর্শক কমিটি এবং কারিগরি নির্দেশক কমিটির মাধ্যমে সমন্বিতভাবে অটিজম সচেতনতা, দ্রুত চিহ্নিতকরণ, সেবা ও পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এ জন্য ১৩টি মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে। চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবেলায় টেকসই কৌশল করে সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা হোসেন বলেন, অটিজম সচেতনতা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী আইন করা হয়েছে। নিউরো-প্রতিবন্ধীদের জন্য ন্যাশনাল ট্রাস্ট আইন করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে কারিগরি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনগত বিষয়ে সেবা দেয়ার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সায়মা হোসেন বলেন, সাতটি খাতে কর্মকৌশল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে মা-বাবাকে ক্ষমতাবান ও শিক্ষিত করা; নীতি ও আইনগত কাঠামো চিহ্নিত করা; সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও মা-বাবার সাথে সহযোগিতা সমন্বয় করা; দক্ষ পেশাজীবী গড়ে তোলা ও অধিকতর প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের সামর্থ্য বাড়ানো; প্রচলিত জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণের সাথে অটিজমকে সম্পৃক্ত করা; দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্ঠনীর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও গবেষণা।
তিনি বলেন, এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে ছয় স্তরে কর্মসূচও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যেখানে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীদের থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যবসা-শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
সায়মা হোসেন অটিজমের ওপর এসব উদ্যোগের ফলে এ পর্যন্ত যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে তা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেন্টার ফর নিউরোডেভলপমেন্ট এন্ড অটিজম ইন চিল্ড্রেন সেন্টার’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি’ বিভাগ এবং অটিস্টিকদের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট চালু করা হয়েছে। কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক, প্রশিক্ষক, চিকিৎসক, সেবাদানকারী ও মা-বাবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অটিস্টিকদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রকর্ম প্রদর্শনীসহ তাদের সৃষ্টিশীল মনের বিকাশের লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অটিজমের ক্ষেত্রে বিশ্বের করণীয়ের ওপর আলোকপাত করে সায়মা হোসেন বলেন, সহযোগিতার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, জীবনের পুরোটা সময় সেবা নিশ্চিত করা, দেশভিত্তিক বহু খাত ও স্তরভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, টেকসই ও সাশ্রয়ী কর্মকৌশল বাস্তবায়ন এবং বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাতে হবে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং কাতারের স্থায়ী প্রতিনিধি আলীয়া আহমেদ আল-যানীর সঞ্চালনায় এ আলোচনা অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিবের পত্নী বান সুনটেক, মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা আমিনা মোহাম্মদ, অটিজম স্পিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সুজান রাইট, ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি অশোক মুখার্জীসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বহুজাতিক কোম্পানির নির্বাহী বক্তৃতা করেন।
বিএ/এমএস