ব্লগার হত্যায় জড়িত কে এই উগ্রপন্থি রানা


প্রকাশিত: ০৯:০৭ পিএম, ০১ এপ্রিল ২০১৫

ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ‘স্লিপার সেল’ এর সদস্য বলে জানা গেছে। মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় খুনের ঘটনায় এই দুই খুনির যোগসূত্র খোঁজা হলেও ঘুরেফিরে আসছে আরও একটি নাম- রেদোয়ানুল আজাদ রানা।

কে এই রানা? কেনই বা ওয়াশিকুর খুনের পর একাধিক ব্লগার হত্যার ঘটনায় রানার নাম আসছে? ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রেদোয়ানুল আজাদ রানা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।

রানা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও নটরডেম থেকে এইচএসসি পাসের পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ করেন। ফেনীর দাগনভূঞায় উত্তর জয়লস্করপুরে বাড়ি রানার।

ডিবি সূত্র জানায়, ছাত্রাবস্থাতেই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে তার। নর্থ সাউথের আরও কিছু ছাত্রকে নিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে রানা প্রায়ই দেখা করতেন আনসারুল্লাহর অন্যতম নেতা জসীমুদ্দিন রাহমানীর সাথে।

আর জসীমুদ্দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকের পর রানাই হয়ে ওঠেন সংগঠনের আন্ডারগ্রাউন্ড নেতা।

ডিবি সূত্র বলছে, উগ্রপন্থিদের নৃশংস হামলার টার্গেটে পড়ছেন বারবার প্রগতিশীল ব্লগার ও লেখকরা। ওয়াশিকুর হত্যার ঘটনায় দুই হত্যাকারী হাতেনাতে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে নানা তথ্য। ব্লগার অভিজিত হত্যার পর ওয়াশিকুর হত্যাকান্ডের তদন্ত ও আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আবারো উঠে আসে রানার নাম। এরপরেই নড়েচড়ে বসে গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার খুনের সময়েই রানার নাম প্রথম আলোচনায় আসে। সে সময় রানার পরিকল্পনায় রাজীবকে হত্যা করা হয় বলে একাধিক আসামি স্বীকারোক্তি দেয়।

কিন্তু সে সময় রানাকে ধরতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ সীমান্তে সতর্কতা জারি করেও তাকে ধরতে পারেনি।

সম্প্রতি ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার পর আবার রানার নাম আলোচনায় আসে। এরপর ওয়াশিকুর হত্যার ঘটনাতেও ঘুরে ফিরে রানার নাম আসছে।

হন্যে হয়ে খুঁজেও রানাকে ধরতে পারছে না একাধিক গোয়েন্দা বাহিনী। তবে এবার দেশত্যাগ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকা ও বিমানবন্দরে রেড এলার্ট জারি করেও রানাকে ঠেকানো যায়নি। ইতোমধ্যেই রানা দেশ ত্যাগ করেছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, রানা বিদেশে পালিয়েছে এমন তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি রানা। অভিজিৎ হত্যার অন্যতম সন্দেহের তালিকাতেও যার নাম, সেই রানা কিভাবে পালাতে সক্ষম হয়েছে তা জানে না গোয়েন্দা সদস্যরা।

ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, ব্লগার ওয়াশিকুর হত্যার ঘটনার সঙ্গে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় খুনের যোগসূত্র রয়েছে।

ওয়াশিকুর হত্যার পর গ্রেফতারকৃত জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলামকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, অভিজিতের হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত অন্তত দু`জন তাদের চেনাজানা। যাত্রাবাড়ীর মেসে তারা নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

জিকরুল্লাহ ও আরিফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের রহস্য ভেদ করা সম্ভব বলেও দাবি গোয়েন্দা পুলিশের।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার(ডিবি) মনিরুল ইসলাম জানান, ওয়াশিকুর হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরিফুল নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানায় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় গ্রেফতার হন। ওই সময় আরও ২৩ জন গ্রেফতার হয়।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা ওই মামলায় আরিফুল চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিলেন। হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা শেষ করে মিরপুরের দারুল উলুম মাদ্রাসায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য পড়ছিলেন আরিফুল।

পরে ওই মামলায় জামিনে বের হয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসীমুদ্দিন রাহমানীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অনুসারী হিসেবে কাজ শুরু আরিফুলের।

মনিরুল ইসলাম আরও জানান, অপর আটককৃত জিকরুল্লাহ হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র বলে প্রাথমিক তথ্যে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে যাত্রাবাড়ী থেকে একজনের মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে।

গত সোমবার রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের দক্ষিণ বেগুনবাড়ীর মসজিদ গলিতে তিন যুবকের হামলায় নিহন হন ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান। এঘটনায় জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম আটক হলেও আবু তাহের নামের একজন পালিয়ে যান।

মনিরুল ইসলাম বলেন, জসীমুদ্দিন রাহমানীসহ তার অনুসারীরা পিকনিকের নামে সেন্টমার্টিন হয়ে মিয়ানমারে আরাকান রাজ্যে জিহাদ করার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর স্লিপার সেলের মতো এদের গড়ে তোলা হয়েছে। এরা কেউ কাউকে চেনেন না বা একে অপরকে চেনার চেষ্টাও করেন না। গুপ্তহত্যার বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে হত্যার মিশনে পাঠানো হয়।

ডিবি সূত্র জানায়, রিমান্ডে হত্যার জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম নির্দেশদাতা হিসেবে মাসুম ওরফে হাসিবের নাম বললেও ডিবির ধারণা রেদোয়ানুল আজাদ রানাই হচ্ছে এই নির্দেশদাতা। যিনি ছিলেন জসীমুদ্দিন রাহমানীর অনুসারী। রাহমানী আটকের পর রানাই ছিলেন মূল পরিকল্পনাকারী।

দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জিকরুল্লাহ ও আরিফুলকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে রানাকে ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রানাকে ফিরিয়ে আনা গেলে ব্লগার রাজিব, অভিজিৎ ও ওয়াশিকুরের হত্যার রহস্য উন্মোচিত হবে।

জেইউ/এসআরজে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।