ধর্মীয় মতাদর্শগত কারণে খুন হন ‘ব্লগার ওয়াশিকুর`


প্রকাশিত: ০১:১৬ পিএম, ৩০ মার্চ ২০১৫

ধর্মীয় মতাদর্শগত কারণে ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর এ জন্য আগে থেকে পরিকল্পনাও করা হয়। সোমবার নিহত ওয়াশিকুর রহমান বাবুর হত্যার ঘটনায় আটক ২ যুবক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও তেজগাঁও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক দু`জন হলেন- চট্রগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রাসার ছাত্র জিকরুল্লাহ ওরফে জিকির ও রাজধানীর মিরপুরের দারুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র আরিফুল ইসলাম।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওয়াশিকুর রহমান ইসলাম নিয়ে ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ আটকৃতদের। আর এ কারণে তাকে হত্যা করা ঈমানি দায়িত্ব মনে করে এক হুজুরের নির্দেশনা পেয়েই ওয়াশিকুরকে সোমবার সকালে কুপিয়ে হত্যা করে তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জাগো নিউজকে জানান, আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ব্লগার ওয়াশিকুরকে হত্যার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে চার জনের নাম পেয়েছি। তবে কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিল তিনজন। এদের মধ্যে দুই জন আটক রয়েছে।

তবে আটককৃতরা ওয়াশিকুরকে আগে থেকে না চিনলেও এক হুজুরের নির্দেশনায় হত্যা করা হয়েছে বলে আটককৃতরা স্বীকার করেছেন বলেও জানান বিপ্লব কুমার সরকার।

তিনি আরো বলেন, আটক জিকরুল্লাহ চট্রগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রাসার ছাত্র। সেখানকার এক হুজুরের হত্যার নির্দেশনা পেয়ে তিনি ঢাকায় আসেন এবং যাত্রাবাড়ীর একটি মসজিদে অবস্থান নেন। সেখানে বসেই আটককৃত দু`জনসহ মোট তিন জন মিলিত হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে।

বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, হত্যার পরিকল্পনা সফল করতে নিহত ওয়াশিকুর কখন বের হয় কোথায় যাচ্ছেন তা আগে থেকে পর্যবেক্ষণ করেছিল তারা। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান তার দক্ষিণ বেগুনবাড়ির বাসা থেকে কর্মস্থল মতিঝিল ফারইস্ট ট্রাভেল এজেন্সি অফিসে যাওয়ার জন্য বের হলে তিনজন তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে আহত করে। পরে মূমুর্শু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে মারা যান তিনি।

হত্যার ঘটনা সম্পর্কে ডিসি আরো বলেন, সোমবার সকালে ওয়াশিকুর বাসা থেকে বের হওয়া মাত্র আক্রমণ করা হবে বলে পরিকল্পনা করে জিকরুল্লাহ, আরিফ ও পলাতক তাহের। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সোমবার সকালে ওয়াশিকুরের বাসার সামনে অবস্থান নেয়। ওয়াশিকুর বাসা থেকে বের হয়ে এগোনো মাত্রই জিকরুল্লাহ ও তাহের চাপাতি নিয়ে কোপাদে শুরু করে। চাপাতির কোপে ওয়াশিকুরের মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

কুপিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন ও টহলরত পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যায় জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম। এ সময় তাদের কাছ থেকে রক্তমাখা চাপাতিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান বিপ্লব কুমার।

আটককৃতদের বরাত দিয়ে তেজগাঁও ডিসি বলেন, ব্লগ কি আমরা বুঝি না, আর তার লেখাও আমরা পড়িনি। হুজুর বলে সে ইসলামবিরোধী। তাকে হত্যা করা ঈমানি দায়িত্ব। আর এ কারণে মূলতঃ ঈমানি দায়িত্ব পালন করতে ওয়াশিকুরকে হত্যা করেছি।

ডিসি বিপ্লাব কুমার সরকার বলেন, “হত্যার নির্দেশদাতা কে, তারা কোনো ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠনের নেতাকর্মী কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে একজনের নাম পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে। শিগগিরই তাকে আটক করা হবে।"

তিনি আরো বলেন, হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে বিশদ জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। হত্যাকারীদের শেকড় কোথায় তা আমরা খতিয়ে দেখছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, থানা পুলিশের বাইরে গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক টিম ও এলিট ফোর্স র‌্যাবের গোয়েন্দা টিমও আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বিকেল চারটার দিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটককৃতদের মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেয়া হয়।

এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন- র‌্যাব জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে সব সময় সোচ্চার। এ ঘটনাটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে ডিবি পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও তদন্ত শুরু করেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্লগার অভিজিৎ, ইসলামী অনুষ্ঠান উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী, পীর লুৎফর রহমান ও ব্লগার রাজিবসহ বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডে হত্যাকারীরা এভাবে হাতে নাতে আটক হয়নি। ওয়াশিকুরকে হত্যার ঘটনায় দু`জন হাতেনাতে আটক হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। তাছাড়া এসব হত্যাকাণ্ডের সাথে কোনো ধরণের যোগাযোগ বা একই মহল জড়িত কিনা তাও জানা যাবে।

শিল্পাঞ্চল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাহ উদ্দীন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ব্লগার ওয়াশিকুর হত্যার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। নিহতের পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তারা থানায় এলেই মামলা রুজু করা হবে।

রাজধানীর তেজগাঁও থানার সাতরাস্তা থেকে পূর্বদিকে ২০০ গজ দূরে মধ্য বেগুনবাড়ির এক গলির রাস্তায় বিসমিল্লাহ মঞ্জিল নামের বাড়ির দ্বিতীয় তলার এক রুমে থাকতেন ওয়াশিকুর রহমান। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পাশের ৪/২ নম্বর বাড়ির সামনেই তাকে হত্যা করা হয়।

# তেজগাঁওয়ে ব্লগার ওয়াশিকুরকে কুপিয়ে হত্যা

জেইউ/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।