পুলিশের ১০ গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকা
বাংলাদেশ পুলিশের একের পর এক স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতায়। পুলিশের অন্তত দশটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব আটকা পড়ে আছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এসব প্রস্তাবে মন্ত্রণালয় কবে টাকা ছাড় দেবে কেউ জানে না। সদ্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়া ১০ হাজার পুলিশ কনস্টেবলের বেতন-ভাতার অর্থ ছাড়ের প্রস্তাবও আটকে আছে মন্ত্রণালয়ে।
এ প্রস্তাবের অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশ থেকে সদ্য নিয়োগ পাওয়া পুলিশ কনস্টেবলরা প্রশিক্ষণের জন্য একাডেমিতে যোগ দিতে পারবেন না। দেশের সকল জেলা থেকে চলতি মাসের বিভিন্ন তারিখে সাড়ে ৮ হাজার পুরুষ কনস্টেবল ও দেড় হাজার নারী কনস্টেবল নিয়োগ করে পুলিশ। ট্রেইনি এসব পুলিশ সদস্য প্রশিক্ষণের জন্য এখনো দিন গুনছেন।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অব্শ্য আশা করছেন, দুই একদিনের মধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয় অন্তত এ প্রস্তাবটি অনুমোদন করে অর্থ ছাড় দেবে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৫০ হাজার নতুন পুলিশ সদস্য নিয়োগ করা সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের সিদ্ধান্ত। এর আলোকে সারাদেশ থেকে আমরা ১০ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। অর্থ মন্ত্রণালয় এসব পুলিশ সদস্যের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় দিলে দ্বিতীয় দফায় আরও নিয়োগের উদ্যোগ নেব।
পুলিশ সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এখনো জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশ সদস্য অনেক কম। জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি চারশ` জনের বিপরীতে একজন পুলিশ সদস্য থাকার কথা। বাংলাদেশে আছে প্রতি এক হাজারের বিপরীতে একজন। ভারতে আছে ছয়শ` জনের বিপরীতে একজন। সেই হিসেবে দেশে অতিরিক্ত আরও ৫০ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৫০০ জন কনস্টেবল ও বাকিরা পুলিশ কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতায় পুলিশের `ফ্রেশমানি` এবং ঝুঁকিভাতার প্রস্তাবও আলোর মুখ দেখেনি। সবশেষ পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নিজে পুলিশের ফ্রেশমানি ভাতা ও ঝুঁকিভাতার দাবি মেনে নেন এবং অবিলম্বে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, ফ্রেশমানি ভাতা দিয়ে কর্তব্য পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের খাবার সরবরাহ করা হবে। দেশের বেশ কয়েকটি বাহিনীর জন্য ইতোমধ্যে এ ভাতা চালু রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংকোচন নীতির কারণে পুলিশের তীব্র পরিবহণ সংকটও দেখা দিয়েছে।
পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স ইতোমধ্যে ৬শ` মোটরসাইকেল, শতাধিক গাড়ি ও দুটি হেলিকপ্টার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাবও যথারীতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। পুলিশের ইন্সপেক্টর ও সাব ইন্সপেক্টরদের জন্য মোটরসাইকেল এবং গাড়ি কেনা হবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপারদের জন্য।
সংকটের কারণে পুলিশ প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি রিকুইজিশন দেয়। এতে পুলিশের প্রতি গাড়ির মালিকদের যেমন ক্ষোভ বাড়ে, তেমনি অভিযানের আগাম তথ্যও ফাঁস হয়ে যায়। রিকুইজিশন করা গাড়ির চালকের কোনও প্রশিক্ষণও থাকে না। তাই অভিযান চালাতে গিয়ে প্রায়ই পুলিশকে বিপদে পড়তে হয় বলে একাধিক কর্মকর্তার অভিমত।
বাংলাদেশ পুলিশের নেই কোনো হেলিকপ্টারও। তাই দুটি হেলিকপ্টার কেনার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। তবে এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ তারা কবে পাবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। পুলিশের উপ-মহাপরির্দশক মকবুল হোসেন ভুঁইয়া জানান, আমরা দুটি হেলিকপ্টার কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হেলিকপ্টার কেনা হলে র্যাবের মতো অভিযান পরিচালনা করতে পারবে পুলিশ।
বিএ/এমএস