সবার দৃষ্টি সার্চ কমিটির দিকে


প্রকাশিত: ০৩:৫১ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

সবার দৃষ্টি এখন সার্চ কমিটির দিকে। এই কমিটি কবে থেকে বৈঠক শুরু করবে, কয়টি বৈঠক করবে, নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাদের নাম প্রস্তাব করবে ইত্যাদি নানা প্রশ্ন সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে এ দায়িত্ব তুলে দেয়া সম্ভব হবে কি না এমনই নানা প্রশ্ন কৌতূহলী মানুষের মধ্যে।

কাল শনিবার সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক। বেলা ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট ভবনের জাজেস লাউঞ্জে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সার্চ কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। কমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, কথা বলছেন। এছাড়া কমিটির কার্যক্রমে সাচিবিক সহায়তা প্রদানকারী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রস্তুতি ও যোগাযোগ শুরু হয়েছে। সুপারিশ চূড়ান্ত করতে সার্চ কমিটি একাধিক বৈঠক করতে পারে বলে জানা গেছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আহ্বায়কের সম্মতির পর আমরা সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা করব। আশা করি, আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যেই সব কার্যক্রম শেষ এবং ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন কমিশন গঠন সম্ভব হবে। তিনি বলেন, অনুসন্ধান কমিটিকে আমরা  প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা দেব। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের কাছে নাম চাওয়া কিংবা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে সাবেক উচ্চপদস্থদের নাম সংগ্রহ করার বিষয়ে সহায়তা চাইলেও আমরা দেব।

গত বুধবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করেন। ওই দিন রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বেঁধে দেওয়া কার্যপরিধি অনুযায়ী, নবগঠিত এই সার্চ কমিটি আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারের নাম সুপারিশ করবে। প্রতিটি পদের বিপরীতে একাধিক ব্যক্তির নাম সুপারিশ করতে পারবে কমিটি। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম একজন নারীর নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। ফলে এই প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশনে একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সার্চ কমিটির ছয় সদস্যের মধ্যে তিনজনের উপস্থিতিতে কোরাম গঠিত হবে। আর সিদ্ধান্তের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষমতা থাকবে। সার্চ কমিটি সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের প্রদত্ত ক্ষমতা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপারিশকৃত নামগুলো থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনার নিয়োগ করবেন। এরপরই শপথ নেবে নতুন ইসি। আর রাষ্ট্রপতির কাছে নামের সুপারিশ করার মধ্য দিয়ে সার্চ কমিটি বিলুপ্ত হবে।

সার্চ কমিটির নাম ঘোষণা হওয়ার আগেই এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ওইদিন থেকেই এটা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বাকযুদ্ধ চলছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ ও নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করার জন্য বিভ্রান্তিমূলক কথা বলছে। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে আন্দোলনের হুমকিও দিচ্ছে। বেশি ষড়যন্ত্র করলে এ দেশের মানুষ সব ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে। এদিকে  মির্জা ফখরুল ইসলাম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি জনগণের আশা আকাংখার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে।

সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আওয়ামী লীগ : নতুন ইসি গঠনের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। গতবারের মতো সার্চ কমিটি তাদের কাছে নাম চাইলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে ক্ষমতাসীন দলটি। এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, `সার্চ কমিটি চাইলে আওয়ামী লীগ থেকে নাম পাঠানো হবে কি-না, তা নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।` রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির প্রতি সবাইকে আস্থা রাখার আহ্বানও জানান দলের এ মুখপাত্র।

এদিকে, নতুন সার্চ কমিটি নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির কঠোর সমালোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টির প্রচেষ্টাকে ভালোভাবে নেয়নি আওয়ামী লীগ। নেতারা বলছেন, শুরুতে এভাবে প্রশ্ন তোলার অর্থই হচ্ছে, এই সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি যে ইসি গঠন করবেন, তাকেও বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা। নতুন ইসির অধীনে অনুষ্ঠেয় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইস্যু তৈরির উদ্দেশ্যেই আগেভাগে সার্চ কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা। এ নিয়ে সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
 
এফএইচএস/ওআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।