পুলিশকে আরও জনবান্ধব হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত: ০৬:৪৩ এএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭
ফাইল ছবি

ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পুলিশের সেবা আরও জনবান্ধব করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার রাজধানীর রাজারবাগ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনসে ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০১৭’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বার্ষিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ভাষণে যে কথা বলেছিলেন, এই দেশ স্বাধীন দেশ, আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের পুলিশ বাহিনী স্বাধীন দেশের পুলিশ বাহিনী। কাজেই তাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে দায়িত্ববোধ থাকতে হবে জনসেবা করার মানসিকতা নিয়ে।’  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ নিরাপদ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আমরা কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম আরও জোরদার করবো। প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে অসহায় বিপন্ন মানুষের ক্ষেত্রে অকুণ্ঠচিত্তে সেবার হাত প্রসারিত করতে হবে। শুধু দেশেই নয়, আজকে আমাদের পুলিশ বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিজেদের কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্ব প্রদান করে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের পুলিশ বাহিনীর অর্জিত অভিজ্ঞতা দেশের আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু দেশি-বিদেশি চক্র নানাভাবে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে চায়। গণতান্ত্রিক পথে মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে এরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। কোমলমতি যুব-কিশোরদের ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদের দিকে তারা ঠেলে দিচ্ছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা করে তাদের (যুব-কিশোরদের) হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। সহিংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষকে হত্যার মতো বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত করছে অথবা আত্মঘাতী হচ্ছে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশের নয়, এটা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের উন্নয়নের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব, গ্লোবাল ভিলেজ। আমাদের পুলিশের কর্মক্ষেত্র, কর্মব্যাপ্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র চুরি-ডাকাতি, হত্যা-রাহাজানি বন্ধ নয়। পুলিশের কাজের ক্ষেত্র আজ বিস্তৃত হয়েছে সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মাদক পাচার, পণ্য চোরাচালন, নারী-শিশু পাচার এমনকি জলজ-বনজ এবং পরিবেশ সংরক্ষণে।’   

তিনি বলেন, ‘স্থিতীশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে পুলিশে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ও সমুন্নত রাখতে শিল্প পুলিশ গঠন করা হয়েছে।’

পুলিশ পদক প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এত বিপুল সংখ্যক পদক অতীতে কখনও বিতরণ করা হয়নি। আপনারা পেয়েছেন কাজের দক্ষতা, যোগ্যতা এবং জনগণকে নিরাপত্তা প্রদান করতে পেরেছেন বলেই পদকে ভূষিত হয়েছেন। এই পদক আপনাদের কাজের স্বীকৃতির পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরও পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আইজিপির পদকে সিনিয়র সচিব হিসেবে করে দেয়া হয়েছে। আমাদের আইজিপি এখন সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। কনস্টেবলদের জন্য ঝুঁকি ভাতা প্রদান করা হয়েছে। আবাসন সমস্যা আমরা সমাধান করছি।’

হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া, কল্যানপুর, আশকোনায় পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য কাজ করছি। দারিদ্র্যের হার আমরা অন্তত আরও ৭-৮ ভাগ কমাবো। যাতে বাংলাদেশকে দরিদ্র দেশ বলে কেউ আর অবহেলা করতে না পারে। দক্ষিণ-এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনের আগে বীরত্বপূর্ণ বিভিন্ন কাজের জন্য পুলিশ সদস্যদের মাঝে পদক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে পুলিশ বাহিনীর কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন তিনি।

এইউএ/এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।