মানবপাচারে জড়াচ্ছে লোকাল এজেন্টরা
আন্তর্জাতিক চক্রের যোগসাজশে জনশক্তি রফতানির নামে মধ্যপ্রাচ্যসহ কমপক্ষে ১৫টি দেশে মানবপাচারে জড়াচ্ছে লোকাল এজেন্টরা। যদিও আগে লোকাল এজেন্টরা শুধু বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের সংগ্রহ ও প্রলুব্ধ করে আসছিল।
বিদেশ পাঠানোর পর আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সঙ্গে সমন্বয়ে আদায় করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ। নৌ, স্থল ও আকাশপথে অবৈধভাবে বিদেশ প্রেরণের জন্য চক্রটি ভুয়া নথিপত্রও তৈরি করে।
র্যাবের কযেকদিনের অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের ১৫ সদস্য গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানা গেছে।
অভিযানকালে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট, বিভিন্ন দেশের জাল ভিসা, অবৈধ ভিসা তৈরি সামগ্রী এবং বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাসহ নগদ সাড়ে ১৬ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী ১০ জনকে উদ্ধার এবং লিবিয়ায় অপহৃত এক ভিকটিমকে উদ্ধার করে র্যাব-৩ এর সদস্যরা।
কারওয়ানবাজারের র্যাবের মিডিয়া উইংয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর সিও খন্দকার গোলাম সারোয়ার বলেন, গত ২ জানুয়ারি নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি র্যাব-৩ এ মানবপাচার ও বিদেশে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের একটি অভিযোগ করেন।
অভিযোগকারী নুরুল জানান, ভগ্নিপতি মো. সুমনকে লিবিয়া হতে মুক্ত করার জন্য মুক্তিপণের সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিয়েছে। কিন্তু আরও সোয়া এক লাখ টাকা নিয়ে বারিধারার মোস্তফা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে গত ৭ জানুয়ারি রাতে টাকা দেয়ার সময় চক্রের মূল হোতা সেলিমুজ্জামান (৪১), শহিদুল ইসলাম (৪৭), মাসুম আহমেদকে (৩৬) আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, প্রবাসী বাঙালি ও লিবিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সমন্বয়ে সুমনকে উদ্ধার করে।
চক্রটির জনশক্তি রফতানির বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে মানবপাচার করে আসছে। চক্রটি অবৈধভাবে বিমান, স্থল ও নৌপথের মাধ্যমে ভারত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, চায়না, থাইল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, ইউকে, ইউএসএ, ইতালি, কানাডা, বলিভিয়া, মোজাম্বিক, নিউজিল্যান্ডসহ ১৫টি দেশে মানবপাচার করে আসছিল।
সিও আরও জানান, সিলেট, মাদারীপুর, নোয়াখালী ও ঢাকার আশপাশে জেলা হতে লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছিল চক্রটি। চক্রের লোকাল এজেন্টরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প আয়ের মানুষদের অল্প খরচে বিদেশে গমনের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করতো। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অনেকেই তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিত। লোকাল এজেন্টরা বিদেশ গমন ইচ্ছুকদের পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, টিকিট ক্রয় দেখিয়ে কিস্তিতে টাকা নিতো।
বিদেশে গমনের ক্ষেত্রে তারা মালয়েশিয়া, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের জন্য জনপ্রতি ৩-৫ লাখ টাকা নিতো। এজন্য লোকাল এজেন্টরা জনপ্রতি দেশভেদে ১০-২০ হাজার টাকা কমিশন পেত। চক্রের মূল হোতা সেলিমুজ্জামান (৪১) স্টুডেন্ট কনসালটেন্সির আড়ালে কোমলমতি ছাত্রদের লিবিয়ায় অবৈধভাবে কর্মী হিসেবে প্রেরণ শুরু করেন।
এছাড়া র্যাব-৩ অপর একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ জানুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশ ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ১০ বাংলাদেশি ভিকটিমকে উদ্ধার করে।
ভিকটিমরা জানায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দালালরা আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে প্রেরণের জন্য প্রলুদ্ধ করে।এ চক্রের মূল হোতা আব্দুল হালিমের স্ত্রী সাহিদা বেগমকে উত্তর বাড্ডা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
জেইউ/এএইচ/জেআইএম