নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নজরদারিতে


প্রকাশিত: ০৩:৪৬ এএম, ২২ মার্চ ২০১৫

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক এমন প্রার্থীদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে তিন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ৪৫টি টিম মাঠে নেমেছে। নির্বাচনের আচরণবিধি লংঘন করে কোনো প্রার্থী আগাম প্রচারণা চালাচ্ছেন কি না তার খোঁজ-খবর নিতে গভীর রাত পর্যন্ত চষে বেড়াচ্ছে এসব টিম।

পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বেঁধে দেয়া সময় শুক্রবার রাত ১২টা পার হওয়ার পর রয়ে যাওয়া বিলবোর্ড, পোস্টারসহ নির্বাচনী প্রচারণামূলক সরঞ্জামের ছবি তুলে রাখছেন এবং সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় তা তুলে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব এলাকায় প্রচারণার খবর পাওয়া যাচ্ছে সেসব এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঢাকার দুটি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত এ তিন সিটিতে মেয়র পদে পাঁচটিসহ সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে মোট ১৬৪টি মনোনয়নপত্র নিয়েছেন প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা। তবে এ পর্যন্ত কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি। আগামী ২৯ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দেয়ার সময় নির্ধারিত রয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিল তিন সিটিতে একযোগে ভোট গ্রহণ চলবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪১টি ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে একটি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে দু`টি, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫টি ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে একটি এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে তিনটি, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮৬টি ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে পাঁচটি মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণামূলক বিলবোর্ড ও ব্যানার সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অনেক এলাকায় পোস্টার তুলে ফেলা হলেও কিছু কিছু এলাকায় এখনো পোস্টার সাঁটানো অবস্থায় দেখা গেছে। জানা গেছে, প্রার্থীর অনুসারীদের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নির্বাচনী সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।

তিন সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং অফিসাররা বলেন, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দেয়া হয়েছে। তারা নিজ নিজ এলাকা ঘুরে দেখছেন এবং যেসব এলাকায় প্রচারণামূলক সরঞ্জাম এখনো রয়ে গেছে সেগুলোর ছবি তুলে রাখা হয়েছে। ওই ছবি দেখে প্রথমবার প্রার্থীদের নোটিশ দিয়ে সতর্ক করা হবে। পরে একই ধরনের অপরাধ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা আরও বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আগাম প্রচারণার অভিযোগ আসছে। তাৎক্ষণিকভাবে ওই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে জনবল স্বল্পতার কারণে সব অভিযোগ যাচাই করা সম্ভব হয় না বলেও জানান তারা।

সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৯টি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১২টি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৪টি টিম সম্ভাব্য মেয়র, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের কার্যক্রম গোপনে পর্যবেক্ষণ করছে। কোনো এলাকায় আগাম প্রচারণা চলছে কি না, প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল-মিটিং করছে কি না, নির্বাচন সামনে রেখে ধর্মীয়, সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ বা অনুষ্ঠানে প্রার্থীরা ভোট চাচ্ছেন কি না ইত্যাদি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধিমালার ধারা ৪ অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত তারিখের ২১ দিন আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচরণা শুরু করতে পারবেন না।

সূত্র আরও জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার দায়িত্বে থাকা ১৯টি টিমের বেশ কয়েকটি টিম এখনো ব্যানার, বিলবোর্ড ও পোস্টারসামগ্রী দেখেছেন।

তারা ওই নির্বাচনীসামগ্রীর ছবি তুলে রেখেছেন। পাশাপাশি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এসব নির্বাচনী সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে দেখেছেন তারা। এ ছাড়া প্রচারণা চলছে- এমন খবরে বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শনে যাচ্ছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

শনিবার সূত্রাপুরের মনীজা রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য এক মেয়র প্রার্থী অংশ নিতে পারেন- এমন খবরের ভিত্তিতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যান কয়েকজন নির্বাচন কর্মকর্তা। তারা সেখানে বেশ কিছু সময় অবস্থান করেন। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো প্রার্থী ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। এমনকি অনুষ্ঠানের ব্যানার ও দাওয়াত কার্ডে সম্ভাব্য ওই প্রার্থীর নাম ছিল না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকা ঘুরে আচরণবিধি প্রতিপালন হচ্ছে কি না তা দেখছেন। পাশাপাশি প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। যেসব এলাকায় নির্বাচনীসামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে তার ছবি তুলে রাখা হচ্ছে। যেসব প্রার্থীর সামগ্রী পাওয়া গেছে তাদের সতর্ক করে চিঠি দেয়া হবে।

একই ধরনের তথ্য জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, আচরণবিধি সঠিকভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কি না- তা দেখতে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। ভোটারদের মধ্যে নির্র্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন বলেন, গভীর রাত পর্যন্ত কর্মকর্তারা নির্বাচনী মাঠ পর্যবেক্ষণ করছেন। কোথাও কোনো আচরণবিধি লংঘনের ঘটনা ঘটছে কি না- তা খতিয়ে দেখছেন। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যা পাওয়া যায়নি। সূত্র : যুগান্তর

বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।