অন্ধকার গলিতেই ঘুরছে যাদের জীবন
বৃষ্টি। তিন বছর আগে ১৫ বছরে পা দিয়েছে। বর্তমানে ১৮তম জন্মদিন উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। ফরিদপুরের সিঅ্যান্ডবি ঘাটের যৌনপল্লীতে কাজ করে। এই যৌনপল্লীতে আসার আগে নিজের বয়স (১৩ বছর) লুকিয়েছিল সে।
বৃষ্টি বলে, আমি এটা বলেছিলাম কারণ না বললে ম্যাডাম আমাকে মারধর করতেন। সেই সময় ওই যৌনপল্লীর একজন প্রাণবন্ত, সুন্দরী কিশোরী ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, পল্লীতে আসা খদ্দেরদের তালিকায় সবার আগে নাম থাকতো এ কিশোরীর।
পাঁচ বছর পর এখন তাকে দেখতে বয়স্ক মনে হয়। মাদকের নেশায় বিভোর এই কিশোরী হাত কেটে মাদক নেয়। অতিরিক্ত মাদক ও নিকোটিনে বিবর্ণ রঙ ধারণ করেছে তার দাঁত।
২০১১ সালে এই তরুণীর মুখে স্মিত হাসি দেখেছিলেন সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের সাংবাদিক জিগর আলদামা। পাঁচ বছর শেষে তিনি আবার ফিরে এসেছিলেন পল্লীর যৌনকর্মীদের জীবনের পরিবর্তিত রূপ দেখতে। পাঁচ বছর আগে যা দেখেছিলেন তার চেয়ে অনেকটাই মলিন চেহারা এখন বৃষ্টির।
শুধু বৃষ্টির চেহারাই নয়; যৌনপল্লীর সব কর্মীর ভবিষ্যৎ অতীতের মতোই অন্ধকার বলে ফরিদপুর ঘুরে গিয়ে লিখেছেন আলদামা। বলেছেন, বৃষ্টির কর্মক্ষেত্র ফরিদপুরের যৌনপল্লীর তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। আগের সফরে এসে যেমন কংক্রিটের ভবন দেখেছিলেন; এখনো তেমন আছে। হেঁটে চলার গলি ও নারীদের থাকার জায়গা মলিন, দেয়ালে পানের পিক।
আলদামা লিখেছেন, আমরা বাংলাদেশে গিয়েছিলাম ২০১১ সালে যে কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলাম তাদের খোঁজে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের সবচেয়ে বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে থাকলেও পল্লীতে বসবাসকারীদের বিষয়ে কোনো রূপকথা খুঁজে পাইনি।
সিঅ্যান্ডবি ঘাটের এই যৌনপল্লীর আরেক কর্মী আশা। কাজের জন্য তার বাবা-মার কাছ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তারা বলেছিল, গৃহকর্মীর কাজ করবে সে। আশা বলেন, সেখানে আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। মাত্র ১৩ বছর বয়সে আমাকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়। ম্যাডাম যে অর্থ দিয়ে আমাকে কিনে নিয়েছিলেন; সেই অর্থ গত বছর পর্যন্ত আমি পরিশোধ করতে পারিনি।
বর্তমানে এক সন্তানের জননী আশার বয়স ২০ বছর। তখন থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছেন; এই অর্থ দিয়ে জমি কিনতে চান তিনি।
অাশা প্রত্যেক খদ্দেরের কাছ থেকে ১০০ অথবা ২০০ টাকা নেন। কিন্তু কোনো খদ্দের পুরো রাত কাটাতে চাইলে তাকে গুণতে হয় ১ হাজার টাকা। আশা বলেন, শরীরের সক্ষমতাও কমে গেছে। কিছু অর্থ দিয়ে খাবার জোগার করেন; বাকিটা চলে যায় গাঁজা কিনতে। তিনি বলেন, এটি ছাড়া এখানে বেঁচে থাকা অসম্ভব।
ফরিদপুরের এই যৌনপল্লীতে ৬ শতাধিক যৌনকর্মী রয়েছে। আশা, বৃষ্টি ও আলেয়াদের মতো অনেকেই শৈশব না পেরোতেই পতিতালয়ে আশ্রয় পেয়েছে। কোনো শিক্ষার ব্যবস্থা নেই, নেই বাড়ি ফেরার সুযোগ; অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ফাঁদে আটকা পড়েছে এসব শিশু যৌনকর্মীদের অনেকেই। জীবন ধারণের লড়াইয়ে অনেকেই স্বপ্ন দেখেন বয়স ৩০ পেরোলেই ম্যাডাম (যৌনকর্মীদের প্রধান) হয়ে যাবেন। নতুন একটি প্রজন্মকে শোষণ করে বাঁচবেন এই পল্লীতে।
এসআইএস/এমএস