মেয়র ও কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা।নিত্যনতুন চমক নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিচ্ছেন নতুন নতুন মুখ।
দক্ষিণ ও উত্তর- দুই প্রান্তেই মেয়র ও কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। দুই সিটিতেই মেয়র এবং কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই মধ্যে তাদের অনেকেই নেমে পড়েছেন নির্বাচনী প্রচারে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠ গরমের সুযোগ পাচ্ছেন বলে মনে করেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এখন পর্যন্ত এই নির্বাচনে নেই। তারা নির্বাচনে নামবে না তাও স্পষ্ট করে বলেনি। আবার তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচনে নামার ঘোষণাও দেয়া হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ দুই সিটিতে মেয়র পদে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। বৈঠক করে কাউন্সিলর পদেও একক প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের এই সিদ্ধান্ত অনেক নেতাকর্মী মানছেন বলে জানা গেছে। ফলে মেয়রের চেয়ে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, তফসিল ঘোষণার পর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। এই দল থেকে অনেকেই মেয়র প্রার্থী হতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, এখন মাঠে একাধিক প্রার্থী দেখা গেলেও সময়মতো দলের সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেবেন। শেষতক সভানেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে কেউই যাবেন না।
আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন আনিসুল হক এবং সাইদ খোকন। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগেরই তিন সংসদ সদস্য কামাল আহম্মেদ মজুমদার, একেএম রহমতুল্লাহ, আসলামুল হক আসলাম।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা এমএ মান্নান কচি, যুব লীগ দক্ষিণের সভাপতি মাঈদুল হোসেন নিখিল মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। একই অবস্থা ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণেও। এ প্রান্তের মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিম। তিনি ঢাকা-৭ আসনেরও সংসদ সদস্য। এছাড়া দলের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনিও দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
দক্ষিণে বাম ঘরানার মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স। এতে দক্ষিণের নির্বাচন বেশি জমজমাট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন এবং উত্তরে দলের যুগ্ম-মহাসচিব বাহাউদ্দিন আহম্মেদ বাবুলের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
দক্ষিণে সমস্যা না হলেও উত্তরে একাধিক প্রার্থীর মাঠে নামার আশংকা আছে। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে চাইছেন দলেরই একটি অংশ। এছাড়া কারাগারে থেকেই উত্তরে মেয়র প্রার্থী হবেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
সর্বশেষ ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ ভাগ হওয়ার পর এই প্রথম নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গ ওঠে আসে। এ সময় সিটি নির্বাচনের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকেই তিনি মেয়র প্রার্থী হিসেবে দক্ষিণে সাঈদ খোকন এবং উত্তরে আনিসুল হকের নাম ঘোষণা করেন। এর কিছুদিন পর অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি তাদের দুজনকে গণভবনে ডেকে নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
প্রাধানমন্ত্রীর এ নির্দেশের পর পুরোদমে মাঠে নামেন সাঈদ খোকন এবং আনিসুল হক। এর পর পরই একে একে মাঠে নামতে শুরু করেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ৮ মার্চ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান উত্তর ও দক্ষিণের মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোট গ্রহণের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা ছাড়াও নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করে। বৃহস্পতিবার ইসি সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইনশৃংখলা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। বৈঠকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন একই দিনে এবং সেক্ষেত্রে আগামী ২২, ২৭ বা ২৯ এপ্রিল ভোট গ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে আলোচনা করেন তারা। সূত্র : যুগান্তর
এআরএস/আরআইপি