ব্যাংক ঋণের দরকার নেই সরকারের!
ব্যাংক ঋণের দরকার নেই সরকারের। বলা যায়, প্রয়োজন নেই বিধায় ব্যাংক ঋণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না সরকার। সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ব্যাপক হারে বাড়ার কারণে ব্যাংক ঋণ তেমন প্রয়োজন হচ্ছে না। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকটের কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও মন্থর হয়ে পড়েছে।
এমনই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার কাটছাঁট করা হয়েছে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার। এডিপির আকার ৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। বাজেটে এডিপির আকার ছিলো ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, গত আট মাসে এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৮ শতাংশ মাত্র।
জানা গেছে, ব্যাংক থেকে এখন সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিচ্ছে, পরিশোধ করছে সেই তুলনায় বেশি। এতে করে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের নিট ঋণ ধনাত্মক হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত আগের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের নিট ঋণ ছয় হাজার ৪৬০ কোটি টাকা ঋণাত্মক হয়েছে। আর আগের বছরের একই সময়ে সরকার ঋণ নিয়েছিল তিন হাজার কোটি টাকার বেশি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণ কমার এই প্রবণতাকে যৌক্তিক মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এডিপি বাস্তবায়নে আগে থেকেই ধীরগতি ছিল। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এটি আরও ধীর হয়ে পড়েছে। ব্যাংকগুলোর আমানতে সুদহার কমার প্রেক্ষাপটে সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য খাত থেকে ভালো টাকা আসছে।
সূত্র জানিয়েছে, অস্থিরতার কারণে এবারে সরকারের রাজস্ব আয় কমতে পারে। এমন অবস্থায় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। চাপ পড়তে পারে মূল্যস্ফীতির ওপর। সব মিলিয়ে সরকার হয়তোবা সচেতনভাবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে যা যৌক্তিক।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। নির্দিষ্ট একটি সময় থেকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত যে পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয়, তাকে নিট ঋণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ নিয়ে থাকে। ব্যাংক খাতে সরকারের নিট ঋণ কমলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে এ সময়ে সরকার প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আগে নেওয়া ঋণের ৯ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে নিট ঋণ ঋণাত্মক ধারায় নেমে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকগুলোর কাছে এখন প্রচুর অলস অর্থ পড়ে থাকায় ধারাবাহিকভাবে তারা ঋণ ও আমানতের সুদ কমাচ্ছেন। বর্তমানে ব্যাংকগুলো গড়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে আমানত নিচ্ছে। ঋণ বিতরণ করছে ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ সুদে। অথচ বেশিরভাগ সঞ্চয়পত্রে এখনো সুদহার আগের মতো ১৩ শতাংশের ওপরে রয়েছে।
সব শেষ তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১৩১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর গত মাস ডিসেম্বরের তুলনায় বেড়েছে ২৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।
পরিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ১৫ হাজার ৭৩৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ৬৮২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বেশি।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
এসএ/বিএ/এমএস