আজ বিশ্ব কিডনি দিবস
আজ ১২ মার্চ। বিশ্ব কিডনি দিবস। এবারের কিডনি দিবসের স্লোগান হলো `সবার জন্য সুস্থ কিডনি`।
কিডনি মানুষের দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রতিদিন ১৮০ লিটার রক্ত আমাদের দুটি কিডনির মাধ্যমে পরিশোধিত হয়, অর্থাৎ শরীরের কোষ পর্যায়ের বিপাকীয় যে বর্জ্য তৈরি হয় তার পরিশোধন কিডনির অন্যতম কাজ। ফলে এ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সুস্থতা রক্ষাও আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন রয়েছে। অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধেও সীমিত আকারে কিছু কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি রোগ দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কিডনি সহজেই আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ সুস্থ কিডনির জন্য ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপের মতো সচরাচর রোগের সঠিক নিয়ন্ত্রণ খুব জরুরি।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এ রোগগুলো ধরা পড়ার পর থেকেই আমাদের অনেক রোগীদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে সতর্কতা ও সচেতনতা লক্ষ্য করা যায় না। এ দুটি রোগ ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আমাদের কিডনি রোগীর পরিমাণ অনেক কমে যাবে। আমাদের সরকারি স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন পর্যায়ে এবং প্রাইভেট প্র্যাক্টিশনারদের মধ্যেও ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের গাইডলাইন অনুযায়ী আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ এবং রিফ্রেশার্স কোর্স চালুর প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের সমাজে সামর্থ্যবানদের মধ্যে জাংকফুডের আসক্তি বেশি দেখা যায়। যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। ধুমপান, ফুসফুস ও হার্টের অসুখের পাশাপাশি কিডনিকেও আক্রান্ত করে। বাত-ব্যাথার বড়ি আমাদের দেশে খুবই সহজলভ্য। প্রয়োজন ছাড়াও আমাদের রোগীরা দীর্ঘমেয়াদে এসব ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন। প্রয়োজন ছাড়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এসব ওষুধ গ্রহণ কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর। ফলে এই বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
কিডনি রোগ বিশেষত ক্রনিক কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। আমাদের দেশে একাধিক সামাজিক সমীক্ষা, এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদী রোগের অর্থনৈতিক প্রভাব নিরুপণের চেষ্টা করেছে। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তে পরিণত হওয়ার ঘটনাও বিরল নয়। সেজন্যই আমাদের দেশে সুস্থ কিডনির প্রতিরোধের যতো উপায় আছে তার দিকে মনোনিবেশ করা খুব জরুরি।
কিডনি সুস্থ রাখার দায়দায়িত্ব কিন্তু চিকিৎসকের একার নয়। আমরা পত্র-পত্রিকায় প্রায়শই খাদ্যদ্রব্যে নানান রকমের ভেজাল মেশানোর খবর পাই। প্রশাসনিক প্রচেষ্টা সত্বেও এক শ্রেণির মানুষের অতিরিক্ত মুনাফার এ চেষ্টা প্রকারান্তরে আমাদের কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকে আমাদের তরুণ সমাজ আক্রান্ত। কারাখানার ভারি ধাতুর বর্জ্য খাদ্যশস্যকে আক্রান্ত করছে যা পরবর্তীতে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। গবাদি পশুকে এন্টিবায়োটিক, ক্লোফেনাক, স্টেরয়েড ইত্যাদি খাওয়ানো হচ্ছে। সেগুলো খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে।
চিকিৎসক সমাজের একার পক্ষে সুস্থ থাকার এ সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। চিকিৎসক, প্রশাসক, পরিবেশবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণির মানুষের মাঝে সমন্বয়মূলক কার্যক্রম ছাড়া সবার জন্য সুস্থ কিডনি দুরাশা মাত্র।
যেকোনো ক্রনিক রোগের মতো কিডনি রোগও প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে তার সুচিকিৎসা সম্ভব। এর ফলে আমাদের রোগীরা দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ও আর্থিক দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
`সবার জন্য সুস্থ কিডনি` এ আহ্বান আন্তর্জাতিক। কিন্তু আমাদের প্রেক্ষাপট স্থানিক। বিশ্ব কিডনি দিবসে নীতি নির্ধারকেরা আমাদের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে জনগণের কিডনির সুস্থতার জন্য নতুন কর্মপরিকল্পনা করবেন, সাধারণ মানুষ তাদের কিডনির সুস্থতার ব্যাপারে অধিক সচেতন হবেন, প্রচার মাধ্যমে কিডনি সুস্থ রাখার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে- সার্বিকভাবে মানুষের কল্যাণ হবে। বিশ্ব কিডনি দিবসে এটাই প্রত্যাশা।
লেখক : ডা. শুভার্থী কর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর কোর্সে অধ্যয়নরত।
বিএ/এসআরজে