ধর্মীয় সন্ত্রাসকারীদের শক্তি বাড়ছে : বন্যা


প্রকাশিত: ০৩:২৩ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৫

বাংলাদেশে আততায়ীর হামলায় নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদ বলেছেন, ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় সন্ত্রাসের প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান এখন খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ধর্মীয় সন্ত্রাসকারীদের শক্তি বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে, এবং একে কীভাবে মোকাবেলা করা যায় সেটি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।

গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আততায়ীরা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়ও তার স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে  কুপিয়ে আহত করে। হাসপাতালে নেবার পর রায়কে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন বলে কথিত এক ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবিকে ইতিমধ্যে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন ২৬শে ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে আততায়ীদের অস্ত্রে আহত হওয়ার পর একজন আলোকচিত্রী যখন সেদিন তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বারবারই জ্ঞান হারাচ্ছিলেন তিনি। হাসপাতালে প্রথম জ্ঞান ফিরে এলে তিনি বুঝতে পারেন, তার সারা গায়ে রক্ত এবং তিনি একটি বুড়ো আঙ্গুল হারিয়েছেন ।

বিবিসি বাংলার মাসুদ হাসান খানকে তিনি সেদিনের হামলার কথা বলতে গিয়ে বলেন, আমার মনে আছে, আমাকে কেউ একজন গাড়ি, বা স্কুটার কিছুতে নিয়ে যাচ্ছে, আমার পুরো শরীরে রক্ত, কাপড়ে রক্ত ভেসে যাচ্ছে, সম্ভবত অভিজিতের মাথা আমার কোলের ওপর। আর আমি বলছি আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

হামলার আগে অভিজিৎ রায়কে বিভিন্ন সময় হত্যাসহ নানাধরনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

এসব হুমকিকে তারা কতটুকু গুরুত্বের সঙ্গে দেখতেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হত্যার হুমকি মূলত: ছিল ফারাবি নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে। নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঐ ব্যক্তিকে ‘ব্লক’ করার কথাও জানান বন্যা। তিনি বলেন, এধরনের হুমকি অনেক বুদ্ধিজীবী ও লেখককেই দেওয়া হয়েছে যার দু’একটিই এপর্যন্ত কার্যকর করা হয়েছে।

হত্যার হুমকি নিয়ে বাংলাদেশে এসে নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টিও তারা ভেবেছিলেন বলে উল্লেখ করেন অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী। আততায়ীর হামলায় আহত রাফিদা বন্যা আহমেদ বর্তমানে চিকিৎসাধীন। কিন্তু বই মেলা থেকে টিএসসির মোড় পর্যন্ত এইটুকু পথে এত মানুষ এত পুলিশের মধ্যে এরকম একটি হামলা হতে পারে বলে এটি তাদের কল্পনার বাইরে ছিল বলেই জানালেন তিনি।

তিনি বলেন বাংলাদেশে হুমায়ুন আজাদ, আসিফ মহিউদ্দীন, আহমেদ রাজীব হায়দার, এখন অভিজিৎ রায়- পর পর এতগুলো ঘটনার মধ্যে দিয়ে একটা ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে এবং এখন গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করা উচিত এই ট্রেন্ড বা প্যাটার্ন দেশকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমার বিবৃতিতে আমি বলেছি যে ধর্মীয়সন্ত্রাসের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা কোথায় তা এখন আমাদের খতিয়ে দেখার সময় হয়েছে।

এই সমস্যা কীভাবে মোকাবেলা করা যায় তা আরো গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন তিনি।  তিনি বলেন, ধর্মীয়সন্ত্রাসকারীদের শক্তি আগের তুলনায় অনেকই বেড়েছে বলে তার ধারণা। তাদের ছুটির অল্প সময়ের মধ্যে, পরিকল্পনা করে, জনবহুল একটা জায়গায়, কয়েক গজের মধ্যে পুলিশের উপস্থিতি সত্তেও যেভাবে এই হামলা হয়েছে তাতে এটাকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে তিনি দেখছেন না।

রাফিদা বন্যা আহমেদ বলেন, অভিজিতের মৃত্যু বাংলাদেশে ব্লগিং আন্দোলনকে আরো এগিয়ে নেবে। তিনি আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং তিনি ও অভিজিৎ রায়যে আদর্শে বিশ্বাস করতেন, সেই আদর্শকে এগিয়ে  নিয়ে যাবার জন্য আবার সক্রিয়ভাবে লেখালেখি করবেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা

এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।