ভারতের চাহিদা মেটাতেই স্বর্ণ চোরাচালান


প্রকাশিত: ০৪:১৫ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রতিবেশি দেশ ভারতের স্বর্ণালঙ্কারের চাহিদা মেটাতেই দেশের বাইরে থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আসছে স্বর্ণ। ভারতে স্বর্ণের চালান পাঠানোর নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশ। চোরাচালানে দেশি-বিদেশি ও বিমানের কর্মচারী-কর্মকর্তাসহ মোট ২৫টি সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে।

সিন্ডিকেটগুলো মানি এক্সচেঞ্জ ও মানি চেঞ্জার ব্যবসার আড়ালেও স্বর্ণ পাচার করছে ভারতে। বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কমায় এ আশঙ্কা আরও বেড়েছে। পাচারের ক্ষেত্রে মূলত স্থলবন্দর ও অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। দুবাই, মালয়েশিয়া, ওমান, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে পাচারের খুব অল্প পরিমাণ স্বর্ণের চালান সীমান্তে আটক হয়।

গত বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আত্মীয় মাহমুদুল হক ওরফে পলাশ, বিমানের চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড সিডিউলিং ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ, ফ্লাইট সার্ভিস শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেন ও ব্যবস্থাপক (সিডিউলিং) তোজাম্মেল হোসেন এবং মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদ গ্রেফতার হন।

এ ঘটনার পর দেশ থেকে পালিয়ে যান বিমানের ডেপুটি চিফ অব ট্রেনিং শামীম নজরুল। অনেকে পালিয়ে গেছেন বিদেশেও। ওই ঘটনার পর বিমানের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়।

সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালান সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালানে ১৮টি চক্র সক্রিয় রয়েছে। বিমানবন্দর ও বিমানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ চোরাচালানে জড়িত। স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় চোরাচালান প্রতিরোধ-সংক্রান্ত কমিটির সভায় চোরাচালানে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে বলা হয়েছে।

গত বছর প্রত্যেক মাসেই স্বর্ণের ৫ থেকে ৬টি অবৈধ চালান ধরা পড়েছে। এ বছরও বড় ধরনের কয়েকটি চালান ধরা পড়ে। শুল্ক গোয়েন্দার দেয়া তথ্য মতে, গত পহেলা নভেম্বর রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট এসকিউ-৪৪৬ অবতরণ করলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১৪ কেজি স্বর্ণ জব্দ করে ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রিভেনটিভ টিম।
gold
এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি দোহা থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করা বাংলাদেশ বিমানের (বিজি ০২৬) ফ্লাইটে অভিযান চালিয়ে বিমানের সিটের নিচ থেকে ছয় কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। চক্রের সদস্যদের অনেকেই মানি চেঞ্জারের সঙ্গে জড়িত। ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালান করছেন তারা। অন্যদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বাজারে সোনার দাম আবারও কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় মানভেদে ভরিতে সর্বোচ্চ ৯৯২ টাকা কমেছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) কার্যনির্বাহী কমিটি এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কমলেও ভারতে সবসময়ই স্বর্ণের চাহিদা থাকে। তাই পাচার করে আনা স্বর্ণের অধিকাংশই ভারতে পুনরায় পাচার হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষক ও গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টদের।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জাগো নিউজকে বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অসাধু কর্মীসহ একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। সম্প্রতি বিমানের বডি থেকে দেড় মণ চোরাই স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় উপমহাব্যবস্থাপকসহ একাধিক ব্যক্তির আটকই এর প্রমাণ। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আরও কেউ স্বর্ণের চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন (অব.) এএম মোসাদ্দেক আহমেদ বলেন, বিমানের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেইউ/ওআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।