তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী
আজ ১৩ আগস্ট তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে শিল্প-সংস্কৃতি জগতের এই দুই কীর্তিমান পুরুষকে। যাদের অসময়ে চলে যাওয়ার শূন্যতা পূরণ করা যায়নি। এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। এদের কীর্তিময় বর্ণাঢ্য জীবনের সাফল্যগাথা মুছে যাবার নয়। তারেক মাসুদ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। তার ‘মাটির গান’, ‘মুক্তির কথা’ বিশেষ করে ‘মাটির ময়না’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। অংশগ্রহণ করে বিশ্ব চলচ্চিত্রের সেরা পুরস্কার উৎসবে। অর্জন করে প্রশংসা।
তার পরিচালিত ‘অন্তর্যাত্রা’ ও ‘রানওয়ে’ ছবি দুটোও বেশ আলোচিত হয়। এসব ছবি নির্মাণে তারেক মাসুদের সঙ্গে ছিলেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ। অনেক স্বপ্ন নিয়ে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন ‘কাগজের ফুল’। কিন্তু সড়কের করালগ্রাস, সেই ‘কাগজের ফুল’কে বিবর্ণ করে দিয়েছে।
আরেকজন মিশুক মুনীর। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর সন্তান, আশফাক মুনীর মিশুক ক্যামেরা ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত পেয়েছিলেন। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিবিসি’র ভিডিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। একুশে টিভির হেড অব নিউজ অপারেশন হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তিন বছর আগে এই দিনে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুড়ির কাছে জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কাছে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর প্রাণ হারান। এ সময় তাদের সঙ্গে প্রাণ হারান আরও তিনজন।
মারাত্মকভাবে আহত হন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদসহ চারজন। তারেক মাসুদ তার পরিচালনায় নির্মিতব্য ‘কাগজের ফুল’ ছবির শুটিং স্পট দেখে ঢাকায় ফেরার পথে এই দুর্ঘটনার শিকার হন। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে বিপরীত দিক ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া চুয়াডাঙ্গাগামী ‘চুয়াডাঙ্গা বিলাস’ নামক বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয় তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর, মাইক্রোবাস চালক মুস্তাফিজ, তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও শর্মী জামালের। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের আকস্মিক মৃত্যুতে মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গভীর শোক নেমে আসে। সেই শোকের বোঝা বহন করে চলেছে শিল্পী, নির্মাতা, মিডিয়া এবং সাংবাদিকবৃন্দ। দেখতে দেখতে সেই অকাল মৃত্যুর তিন বছর পূর্ণ হলো আজ।