বিথুন হত্যা : অবশেষে মামলা সিআইডিতে


প্রকাশিত: ০১:১৪ পিএম, ০৭ মার্চ ২০১৫

হত্যার ৩৮ দিন পেরিয়ে গেলেও দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক উপদেষ্টা সম্পাদক আখতার-উল আলমের মেয়ে ফাহমিদা আখতার বিথুন হত্যার ঘটনায় কোনো অগ্রগতিই করতে পারেনি পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে মামলাটির তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দেওয়া হয়েছে। গত ১ মার্চ মামলার তদন্তভার নেয় সিআইডি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাড়ির গৃহকর্মী ও নিরাপত্তা প্রহরীকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ঘটনাস্থল থেকে সিআইডি ক্রাইম সিন আলামত সংগ্রহ করলেও মামলার তদন্তে অগ্রগতি হয়নি লম্বা সময় পেরিয়ে গেলেও। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে কাউকে গ্রেফতারও করতে পারেনি পুলিশ। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর রামপুরা এলাকায় নিজের বাসায় খুন হন এই নারী আইনজীবী।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যার ঘটনায় সংগৃহীত আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খুনিকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, আর্থিক-লেনদেন বা পূর্ব শত্রুতার জেরসহ নানা বিষয় সামনে রেখে এ খুনের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে।

তবে প্রথম থেকেই পুলিশ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসাবে ধারণা করে তদন্ত করে আসলেও ভিসেরা ও ময়নাতদন্তের রিপোর্টের প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রামপুরা থানা পুলিশের কাছ থেকে মামলাটির তদন্তভার অধিকতর তদন্তের স্বার্থে সিআইডি পুলিশের কাছে অর্পণ করা হয়।

গত ১ মার্চ সিআইডি পুলিশের কাছে মামলাটির তদন্ত দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জাগোনিউজকে জানিয়েছেন রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমার তরফদার।

এ দিকে বিথুন হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন নিহতের স্বজনরা। কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে বিথুনকে খুন করেছেন তা জানতে চান তারা।

গত ৩০ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর রামপুরা থানার পশ্চিম রামপুরার মহানগর প্রজেক্টের ৫ নম্বর সড়কের ১০৫ নম্বর পাঁচতলা বাড়ির ডি নম্বর ফ্ল্যাট থেকে হাত-পা বাঁধা, চোখ-মুখে মরিচের গুঁড়া ছিটানো, গলায় ওড়না ও চাদর দিয়ে পেঁচানো বিথুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডটি সুপরিকল্পিত। এতে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার সম্ভাবনাও বেশি।

২৫ বছর আগে গোলাম রব্বানীর সঙ্গে সংসার শুরু করেছিলেন ফাহমিদা আক্তার বিথুন। এরপর চাকরি নিয়ে দেশের বাইরে যান রব্বানী। এই দম্পতির একমাত্র ছেলে সিরাতুল মুস্তাকিমও দুই বছর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। এরপর থেকে রামপুরার ওই বাসায় একাই থাকতেন বিথুন। স্ত্রী হত্যার খবর পেয়ে দেশে ফেরেন স্বামী গোলাম রব্বানী।

তিনি জাগোনিউজকে বলেন, ঘটনার তিনদিন পর পুলিশের সাথে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বাসার প্রায় ৫০-৫৫ ভরি স্বর্ণালংকার নেই। তিন কাঠা একটি জমির রেজিস্ট্রশনের কাগজপত্রও পাওয়া যায়নি। তাছাড়া বিথুনের মোবাইল ফোনটিও খোয়া গেছে।

এ দিকে বিথুন খুনের ঘটনায় রাতেই ভাই টিআইবির আউট রিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক রিজওয়ান-উল-আলম বাদি হয়ে রামপুরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

রেজোয়ানুল আলম জাগোনিউজকে বলেন, হত্যাকেণ্ডের সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় আমরা উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রাখতে চাই। তার মানে এই নয় তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কালক্ষেপণ আমরা মেনে নেবো। আমরা যতো দ্রুত সম্ভব জানতে চাই কেন, কারা বিথুনকে নির্মমভাবে হত্যা করলো।

ওই বাসায় গিয়ে পুলিশ, দারোয়ান, কাজের বুয়াসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বাসাটিতে একাই থাকতেন ফাহমিদা। তিনি বেশি বাইরেও বের হতেন না।

ভবনের কেয়ারটেকার আবদুর রউফ ও ফাহমিদার ফ্ল্যাটের কাজের বুয়া সাবিহা বেগমকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। রউফ তিন মাস আগে এ ভবনে কাজে যোগ দেন। আর সাবিহা দু’বছর ধরে আছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, বাসার ভেতরে কেউ আগে মেহমান হিসেবে প্রবেশ করেছিল। আর সেই মেহমানই খুনি হতে পারে। খুনিদের শনাক্তে বাসার ভেতরে থাকা কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।

খিলগাঁও অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) নূর আলম বলেন, দেখে মনে হয়নি এটা কোনো ডাকাতি ও চুরির ঘটনা। খুনের নেপথ্যে কোনো পারিবারিক কারণ, জমিসংক্রান্ত বা পূর্বশত্রুতা বিষগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এর আগে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, ভাই কোনো ইম্প্রুভ নাই। অগ্রগতি সেই আগের মতো নেগেটিভ।

রামপুরা থানার ওসি মাহবুবুর রহমার তরফদার জাগোনিউজকে বলেন, রামপুরা থানা পুলিশ হত্যা মামলাটির তদন্ত করে খুনিদের গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষ অধিকতর তদন্তের স্বার্থে মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর করেছে।

সিআইডি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রামপুরা থানা পুলিশ মামলাটি তদন্তে অগ্রগতি আনতে না পারায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নাখোশ হয়ে মামলাটির তদন্ত দায়িত্ব সিআইডিকে দিয়েছে।

এ ব্যাপারে মামলাটির নতুন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক জিয়াউল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগোনিউজকে বলেন, মামলাটির অফিসিয়াল কাগজপত্র সপ্তাহখানেক হলো হাতে পেয়েছি। ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সিআইডির পক্ষ থেকে আমি ছায়া তদন্ত চালিয়ে আসছিলাম। এরপর আমাকে গত ১ মার্চ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।

এখন পর্যন্ত ভিসেরা ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তদন্তের অগ্রগতির স্বার্থে আমরা সময় নিয়ে কাজ করতে চাই। ভিসেরা ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে তদন্তে একধাপ অগ্রগতি আসবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জেইউ/এসএ/বিএ/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।