৮৪ ব্লগার আনসারুল্লাহর তালিকায়
আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ব্লগ ব্যবহার এমন ৮৪ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসব ব্লগারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ৮৪ জনের তালিকা এর আগে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি তালিকা রয়েছে। ৮৪ ব্লগারের মধ্যে কয়েকজন এবিটির হত্যা তালিকার অন্যতম। এর মধ্যে অভিজিৎ রায় তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে ৮৪ ব্লগারের তালিকা ছিল তারা সবাই নয়টি ব্লগে লেখালেখি করতেন। এর মধ্যে ড. অভিজিৎ রায়ের মুক্তমনা ব্লগ তালিকায় তিন নম্বরে ছিল। অন্য ব্লগগুলো হচ্ছে সামহোয়ার ইন ব্লগ, আমার ব্লগ, নাগরিক ব্লগ, ধর্মকারী ব্লগ, নবযুগ ব্লগ, সচলায়তন ব্লগ, চুতরাপাতা ব্লগ ও মতিকণ্ঠ ব্লগ।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ ব্লগারদের তালিকা দেয় হেফাজতে ইসলাম। ওই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের অন্যতম সদস্য ব্লগার রাজীব হায়দার শোভনকেও ধর্ম নিয়ে কটূক্তির জন্য প্রাণ দিতে হয়। গত মাসের ২৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানমনস্ক লেখক মার্কিন নাগরিক ড. অভিজিৎ রায়কে টিএসসির জনবহুল এলাকায় হত্যা করে উগ্রপন্থীরা। আর এ খুনে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে দেখছে গোয়েন্দারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের প্রতিবাদ মঞ্চ (গণজাগরণ মঞ্চ) তৈরি হয়। পরে এই আন্দোলনে যুক্ত হয় বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন মাঠে সক্রিয় হয়। তখন থেকে কিছু ব্লগারকে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহর প্রধান কারাবন্দি মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানী সব ধরনের কলকাঠি নাড়ছেন। আর এর সঙ্গে দলটির ১৫ থেকে ২০ সদস্যের একটি অপারেশনাল টিম কাজ করছে, যারা রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে অপরাধ করে থাকে।
গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নতুন কৌশলে মাথা চাড়া দিয়েছে। এই উগ্রপন্থী সংগঠনের সদস্যরা ধর্ম অবমাননাকারী ব্লগারদের তালিকা হাতে নিয়ে তাদের হিটলিস্টে রেখেছে। এরা রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে নাশকতার চেষ্টা বা নাশকতা করে থাকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে উগ্রপন্থীরা নাশকতার চেষ্টা করে থাকে। বিশেষ কী ধরনের অপরাধ করলে তা প্রচার পাবে সে কৌশলও নেয় উগ্রপন্থীরা।
তিনি বলেন, যারা ব্লগে কটূক্তিমূলক লেখা পোস্ট করে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার বিধান আছে। গোয়েন্দা পুলিশ অতীতেও এ ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় এনেছে। এখনও তাদের পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম বলেন, বিভিন্ন সময় গোয়েন্দা পুলিশ বেশ কয়েকজন ব্লগারকে সতর্ক করে দেয়। পাশাপাশি ওই তালিকায় থাকা পাঁচ ব্লগারকে গ্রেফতারও করা হয়। কটূক্তির অভিযোগে তাদের গ্রেফতারের পর এ ধরনের লেখা পোস্ট না করতেও বলা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিজিৎ রায় খুনের পর সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে গোয়েন্দাদের কিছু ব্লগ নজরদারির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমনকি উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এসব ব্লগারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি অভিযান চালাতেও বলা হয়েছে গোয়েন্দাদের। সূত্র : যুগান্তর
বিএ/আরআই